সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার আগে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দিলে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন “বন্ধ করে দেওয়া হবে” এমন সতর্ক বার্তাও দেন তিনি। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় দাবি করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচারে তিনি আদালতে উপস্থিত নন; অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার চলছে। ২০২৪ সালের ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে নির্বাচন ব্যাহত হবে—এই আশঙ্কা থেকে দলীয় সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারে বলে জয় মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলার চাপ এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিধিনিষেধের কথা উঠে এসেছে। জয় মনে করেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের বৈধতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়; এতে ভোটার ও কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে।
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়। সহিংস পরিস্থিতিতে প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা নিয়ে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন আসে, যা রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার বলেছে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ বা কার্যক্রমে কঠোর বিধিনিষেধ দিলে গণতন্ত্র দুর্বল হয় এবং সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ে। এদিকে আসন্ন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলও নজর রাখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আদালতের রায়ে যদি শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হন এবং আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে, তাহলে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে প্রশাসনিক প্রস্তুতি, ভোটার উপস্থিতি ও গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চাপ বাড়বে, আর সামাজিক সহাবস্থানও ব্যাহত হতে পারে।
উত্তেজনা প্রশমনে রাজনৈতিক সংলাপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, রায় যাই হোক—গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব পক্ষকে অংশগ্রহণের সুযোগ, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার ও মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। নির্বাচনের আগে স্পষ্ট রোডম্যাপ, নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
শেখ হাসিনার মামলার রায়কে ঘিরে সজীব ওয়াজেদ জয়-এর সতর্কবার্তা রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন চাপ যোগ করেছে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে সহিংসতার আশঙ্কা, আর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা—দুই সম্ভাবনাই গুরুতর। এখন পুরো দেশের নজর আদালতের রায় ও পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, যা বাংলাদেশের নির্বাচন, স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করবে।