কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর নীতিগুলো বাংলাদেশকে “অত্যন্ত বিপদজনক” অবস্থার দিকে ধাক্কা দিচ্ছে। তিনি এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছেন, “আপনি দেশের সমস্যাটা কী বুঝবার চেষ্টা করছেন? আপনাকে জাতীয় ঐকমত্য করতে বলেছে কে?”
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনায় ফরহাদ মজহার এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের কেউ নন। যারা রাস্তায় বুকপেতে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন, তার ভিত্তিতেই আমরা কথা বলছি। ড. ইউনূস সেটা করেননি।”
মজহার বলেন, আন্দোলনে যে আত্মত্যাগ হয়েছে, পঙ্গু, হাসপাতালে যাঁরা আছেন—এই বাস্তবতা ড. ইউনূস দেখেছেনই, তবুও কেন তিনি নির্বাচনের জন্য তৎপর, তা তিনি তার প্রশ্ন হিসেবে তুলেছেন। তিনি আদৌ বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, জুলাইয়ের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা “নির্দলীয়” হয়ে সেই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় বরং নির্বাচন আয়োজনের জন্য দ্রুততা নিচ্ছে।
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, “চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব মূলত জনগণের, যেখানে শিবির, সেক্যুলার, বামপন্থী ও তরুণ ছাত্র-শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ছিল। জনগণই রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কোনো এক ব্যক্তি নয়।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, যদি পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবৈধ লুটেরা-শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বই থেকে যায়, তাহলে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো অর্থ থাকবে না।
প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তে চব্বিশের নেতা-নেত্রীদের সামনে আনায়ও তিনি কড়া সমালোচনা করেন। “কীভাবে তরুণদের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হলো, এই সিদ্ধান্ত আমাকে স্তম্ভিত করেছে,” বলেন মজহার। তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচনকে বৈধভাবে দেখা যাবে না।
ফরহাদ মজহার প্রধান উপদেষ্টার বহুকাল বিদেশ সফরের কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আপনি এক থেকে দেড় বছর থাকবেন আর সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াবেন—এর কোনো যুক্তি নেই। দেশের সমস্যাগুলো কী, সেটি বুঝে নেয়া উচিত ছিল।” তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখানোরও আহ্বান জানান, যার ঘোষণা ও পটভূমি সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার ব্যাখ্যা মেলেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমি বলছি, ১০৬ অনুচ্ছেদে আপনাকে মতামত দেওয়া হয়েছে। দেখি, দেখান আমাদেরকে কী ছিল সে মতামতে। কারা ছিল সে মতামতে। সুপ্রিম কোর্টের কোন আইনজীবী এবং কোন বিচারপতি মত দিয়েছেন? তাদের নাম কী? আমরা কথা বলতে চাই। আমরা তর্ক করতে চাই।
“আমাদের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। আমি ড. ইউনূসকে করজোরে বলব, আমাদেরকে পদত্যাগপত্র দেখান। আপনারা এখনও দেখাতে পারেননি। তারপরে প্রেসিডেন্ট বলছে, না। তিনি জানেন না পদত্যাগপত্র কোথায়। এটা তো হতে পারে না। আপনি তো তামাশা করতে পারেন না। আপনি তো রাষ্ট্র এবং ১৭ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারেন না।”
আলোচনার সময় মজহার যুক্তি দেন, নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু না করে পুরনো কাঠামো বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করলে সেটি অর্থবোধক কিছুই হবে না। তিনি জানান, জনগণের পরিষ্কার কণ্ঠস্বর ছাড়া কোনো রাজনৈতিক পুনর্গঠন সম্পূর্ণ হবে না।
সভায় ফরহাদ মজহারের বক্তব্যকে ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া ওঠে; তারই ধারাবাহিকতায় তিনি পশ্চিমা অনুদান, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি ও দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।