ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক এক দিন পরই ঢাকার বিজয়নগরে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ব্যাটারিচালিত রিকশায় মতিঝিল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা এক ব্যক্তি খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন যা হাদির মাথায় বিদ্ধ হয়।
ঘটনার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি অস্ত্রোপচারে তার মাথা থেকে গুলিটি বের করা হয় এবং খুলি খুলে রক্ত জমাট পরিষ্কার করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রেখে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা ‘চরম সংকটাপন্ন’।
পেশাদার শ্যুটারের কাজঃ এক গুলিতে চলন্ত লক্ষ্যভেদ
ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, হাদির রিকশার ডান পাশ দিয়ে মোটরসাইকেলটি ঘেঁষে ওঠে। পেছনের আসনে বসা ব্যক্তি মুহূর্তের মধ্যে অস্ত্র বের করে একটি গুলি ছোড়ে। ফাঁকা রাস্তায় গুলির পর মোটরসাইকেলটি দ্রুত পালিয়ে যায়।
ঢাকার অপরাধ সাংবাদিকতায় দীর্ঘদিন কাজ করা পারভেজ খান বলেন, “একটি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে আরেকটি চলন্ত যানে থাকা ব্যক্তিকে এক গুলিতে লক্ষ্যভেদ, এটা অত্যন্ত পেশাদার শ্যুটারের কাজ।” তিনি মনে করেন, ঘটনাটি কোনো কাকতালীয় সহিংসতা নয়; পরিকল্পিত।
আততায়ী কি হাদির প্রচারসঙ্গী?
হামলার কিছুক্ষণ পর হাদির সতীর্থরা দুটি ছবি প্রকাশ করেন যেগুলো লিফলেট বিলির সময় তোলা। একটি ছবিতে মাস্ক পরা তরুণকে হাদির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়, আরেকটিতে স্যুট–কোট পরা একজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দাবি, এ দুজন সকাল থেকেই নির্বাচনি প্রচারে হাদির সঙ্গে থাকলেও আচরণ ছিল সন্দেহজনক। তারা জুমার নামাজেও যাননি বরং বাইরে দাঁড়িয়ে হাদির গতিবিধি লক্ষ্য করছিলেন।

এদের ছবির সঙ্গে সিসিটিভিতে মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তির চেহারা মিলিয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে আততায়ী হয়তো হাদির সঙ্গেই ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ছবিগুলোর এআই-ভিত্তিক মুখচ্ছবি তৈরি নিয়ে আলোচনা চলছে।
পুলিশ বলছে সন্দেহের বাইরে কেউ নয়
পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডের সামনে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডি গুলির খোসা সংগ্রহ করে। ডিএমপি জানিয়েছে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ চলছে, জড়িতদের শনাক্তে থানা পুলিশ ও ডিবি বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, “কারা এবং কেন গুলি করেছে তা জানতে তদন্ত চলছে।”
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবির বলেন, “আমরা কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখছি না। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা ক্ষমতাচ্যুত শক্তির স্বার্থ—দুই দিকেই সম্ভাবনা রয়েছে।”
হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা, মোতায়েন সেনা–বিজিবি
হাদিকে ঢামেকে আনার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাসপাতাল চত্বরে তার সমর্থক, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের ভিড় জমে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ নামানো হয়। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দ্রুত তদন্ত ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মন্তব্য করেন, “এটি দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ।”
হাদির অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।