জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদল’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের দাবি, একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দলীয় উপদেষ্টা থাকলে তাদের সরিয়ে ইউনূস সরকারই যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নেয় সে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপি।
মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিএনপি নেতারা এই দাবি জানান। বৈঠকে নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, বদলি-পদায়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এবং নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যেকোনো ধরনের বদলি বা পদায়ন সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করেন যে, জেলা প্রশাসকসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে বাছাই করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তার তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের বাছাই করে নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। এখানে যিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, সেই ব্যক্তিকেই আমরা বেছে নেব। এটি আমার তত্ত্বাবধানে থাকবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা করব।”
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আজকে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে এসেছিলাম কতগুলো রাজনৈতিক কনসার্ন নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেটিকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে কেয়ারটেকার গভার্নমেন্টের আদলে নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কেয়ারটেকার গভার্নমেন্ট বলতে আমরা যা বোঝাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকাতেই এখন যেতে হবে। প্রশাসনকে জনগণের কাছে নিরপেক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।”
বিএনপি নেতারা বৈঠকে ‘বিতর্কিত’ কোনো কর্মকর্তা, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচনি দায়িত্বে ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানান।
বিএনপি প্রতিনিধি দলে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বৈঠকটি চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত।
বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তারা বিশেষভাবে পুলিশের নিয়োগ ও বদলি প্রক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিএনপি নেতারা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করায় এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সফলভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান।
তবে পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দলটি। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এসব ঘটনা অন্তর্ঘাতমূলক কি না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুহাম্মদ ইউনূস।