দীর্ঘ দেড় যুগের নির্বাসন শেষে অবশেষে মাতৃভূমিতে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে ব্যাপক জনসমাগম, স্লোগান ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমা রহমান।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু), রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে তারেক রহমান জুতা খুলে শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে দেশের মাটির স্পর্শ নেন। এক টুকরো মাটি হাতে নিয়ে মাতৃভূমির প্রতি আবেগ প্রকাশ করেন তিনি—এই দৃশ্য ঘিরে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়।
বিমানবন্দর থেকেই তিনি ফোনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। কথোপকথনে তাকে ধন্যবাদ জানাতে ও সৌজন্যমূলক কথা বলতে শোনা যায়।
দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে লাল-সবুজ ও বিএনপির পতাকার রঙে সাজানো একটি বাসে চড়ে তিনি পূর্বাচলের তিনশ ফিট সড়কের সংবর্ধনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়িবহর ধীরগতিতে এগোতে থাকে। বিমানবন্দর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে সংবর্ধনাস্থল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সারি সারি নেতাকর্মী অবস্থান নেন। স্লোগান, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফুল হাতে তারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানান।
জনস্রোতের কারণে বিমানবন্দর সড়ক ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
পূর্বাচলের তিনশ ফিট সড়কের সংবর্ধনাস্থল সকাল থেকেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা—বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে হাজারো নেতাকর্মী বিশেষ ট্রেন ও বাসে ঢাকায় পৌঁছান। অনেকেই রাত কাটান খোলা আকাশের নিচে।
সংবর্ধনা মঞ্চের ব্যানারে লেখা ছিল—‘জনাব তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’। পুরো এলাকায় ‘লিডার আসছেন’সহ বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ।
ঢাকায় পৌঁছানোর আগে সকালে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতির সময় ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে তারেক রহমান লেখেন, “অবশেষে সিলেটে, বাংলাদেশের মাটিতে!” এর আগে তিনি লেখেন, “দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!”
সংবর্ধনা শেষে তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন, যেখানে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন। পরে তিনি গুলশানের বাসভবনে যাবেন।
এদিকে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি তারেক রহমান ও তার পরিবারকে দেশে ফেরায় শুভেচ্ছা জানান।
তারেক রহমান তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ফেসবুকে একটি সংক্ষিপ্ত পোস্টে লেখেন—“সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।”