আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আর নেই। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে কারাবন্দি অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালের দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আইসিইউতে রেফার্ড করা হয়। সেখানে আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
১৯৫০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর মনোহরদীর গোতাশিয়ার বাগানবাড়ী এলাকায়। তার বাবা আইনজীবী এম.এ.মজিদ ও মা নূর বেগম। তার দাদা শুক্কুর মাহমুদ ১৯২৩ সালে তৎকালীন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। নুরুল মজিদ ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএসসহ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশায় একজন আইনজীবী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বৃহত্তর ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তার পরিচয় শুধু আইনজীবী হিসেবে নয়, তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যুবলীগের প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তার সংসদীয় জীবন শুরু হয় ১৯৮৬ সালে, যখন তিনি নরসিংদী-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ওই মেয়াদে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশীয় শিল্প উন্নয়ন, উদ্যোক্তা সহায়তা এবং রপ্তানি প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও নরসিংদী-৪ আসন থেকে জয়ী হন এবং দ্বিতীয়বারের মতো শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। তার রাজনৈতিক জীবনজুড়ে ছিল আদর্শ, নিষ্ঠা এবং নেতৃত্বের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। আইন, রাজনীতি ও প্রশাসনিক দক্ষতার সমন্বয়ে তিনি দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থেকে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওইদিন নরসিংদীতে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। তার জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।