মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এ রায়কে “অবৈধ ও প্রতিশোধপরায়ণ” আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ রায় ঘোষণা করে। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড এবং রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামুনকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়।
রায় ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দাবি করেন, “এই রায় বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ এই রায় মানে না, মানবে না।” তিনি অভিযোগ করেন, “অবৈধ আদালত” মাত্র দুই মাসের ভেতরে মাত্র ২০ কার্যদিবসে ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনকে হাজির করে “হঠাৎ করে” মামলা শেষ করেছে।
নানক আরও বলেন, মামলার প্রধান বিচারক গত এক মাস অনুপস্থিত থাকলেও “অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ো করে রাজনৈতিক প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে” এ রায় দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আর তাকে আদালতের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে ফেলতে বর্তমান সরকার “চকচক করা আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে।”
তিনি ঘোষণা দেন, “অচিরেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবো।” পাশাপাশি কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও দলের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল–সন্ধ্যা শাটডাউন পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রায় ঘোষণার আগে গত রোববার ও সোমবারও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছিল। দলের নেতাদের দাবি, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিচারটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত “ফরমায়েশি সিদ্ধান্তের” ইঙ্গিত বহন করে।
সোমবারের রায় ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করেছে। শাটডাউন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে বিভিন্ন জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দল হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের লাগাতার শাটডাউন ডাক বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দিতে পারে—বিশেষ করে রায়ের বৈধতা ও গণস্বীকৃতি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা আগামী দিনগুলোতে আরও তীব্র হতে পারে।