সর্বশেষ

ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল বাড়ছে

ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আওয়ামী লীগ, আজ ৪৬ জন সহ ১০ মাসে গ্রেপ্তার ৩ হাজার

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:১৮
ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আওয়ামী লীগ, আজ ৪৬ জন সহ ১০ মাসে গ্রেপ্তার ৩ হাজার

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অবৈধ সিদ্ধান্ত’ ও শাসন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রাজপথে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় দেখা যাচ্ছে মিছিল, যেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরাসরি অংশ নিচ্ছেন। এসব মিছিলে অংশ নেওয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানও বাড়ছে—শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

এ নিয়ে চলতি বছরের ১০ মাসে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী। পুলিশ বলছে, এসব মিছিলের উদ্দেশ্য ‘রাজধানীতে আতঙ্ক তৈরি করা’। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারহীনতা এবং নাগরিক স্বাধীনতা হরণ—এসবের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতেই তারা রাজপথে নেমেছেন।

 

 

শুক্রবার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দাবি করেন, নিষিদ্ধ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে “রাজধানীতে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা” করা হচ্ছে। তার ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃতদের ‘বেশিরভাগই’ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন এবং তাদের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ বাবদ “নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা” দেওয়া হয়।

 

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সরকারের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যারা মাত্র এক বছর আগে ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারাই এখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও প্রতিবাদকেও ‘অপতৎপরতা’ হিসেবে দেখছেন।

 

শুক্রবার গ্রেপ্তার আবারও বাড়ল

 

গ্রেপ্তার হওয়া ৪৬ জনের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আনিসুজ্জামান রনি, ছাত্রলীগের মোমিনুল হাসান সোহান, রকিবুল হাসান, ইয়াসিন আরাফাত শুভ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধন, সুমন হোসেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল ইসলামসহ বিভিন্ন জেলা–উপজেলার একাধিক নেতাকর্মী। শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে একাই ধরা হয়েছে ১৮ জনকে। পুলিশের দাবি, মিছিলের জন্য ৯০ থেকে ১০০ জন জড়ো হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

 

পুলিশ বলছে, কিছু মিছিলকালে ‘ককটেল’ পাওয়া গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা বলছেন, অধিকাংশ সময় পুলিশই গ্রেপ্তারের যৌক্তিকতা দেখাতে এমন অভিযোগ দাঁড় করায়, আর বাস্তবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে বাধা দিতেই এই মামলাগুলো ব্যবহার হচ্ছে।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিচারিতা—মুখে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু বাস্তবে নয়

 

যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও কণ্ঠের স্বাধীনতা’ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, আজ সেই সরকারের অধীনেই দেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের গণগ্রেপ্তার অব্যাহত। দেশের মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি নতুন বাংলাদেশ, নাকি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করারই আরেক রূপ?

 

 

একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, সরকারের বেপরোয়া গ্রেপ্তার প্রমাণ করছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আগেই ছিল। বিরোধী কণ্ঠের প্রতি শাসকের এই কঠোরতা দেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।

 

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য

 

মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দমন–পীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, অর্থনৈতিক সংকট, কারাগারে মৃত্যু এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে চোখ সরাতে মানুষকে ভয় দেখানোর কৌশল হিসেবে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারা বলছেন, রাজপথে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতন্ত্রের অধিকার, এবং সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার নামে।

 

তাদের দাবি, “ইউনূস সরকার জবাবদিহি চায় না। তারা ভয় পায় গণতান্ত্রিক রাজপথকে।”

 

শাসনের সংকট

 

ডিএমপি বলছে, মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের পূর্বাপর ইতিহাস যাচাই করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, রাজপথে প্রতিবাদ ঠেকাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করা সরকারের ফ্যাসিস্ট প্রবণতাকেই আরও স্পষ্ট করে।

 

দেশের মানুষের প্রশ্ন—স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে ক্ষমতায় এসে কেন আজ তাদের কাছে রাজনৈতিক অধিকার, শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং মতপ্রকাশই সবচেয়ে বড় অপরাধ?

 

রাজপথ গরম, গ্রেপ্তার অব্যাহত। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভাষ্য পরিষ্কার, “দমন দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই হবে।” ফলে ঢাকার রাজনীতি চুপ হয়ে যাচ্ছে না বরং অস্থির সময়ের দিকে আরও দ্রুত এগোচ্ছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের তীব্র নিন্দা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের তীব্র নিন্দা

মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মৃত্যু

মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মৃত্যু

‘যতদিন বেঁচে থাকবো, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেঁচে থাকবো’: কাদের সিদ্দিকী

লতিফ সিদ্দিকীর জামিন ‘যতদিন বেঁচে থাকবো, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেঁচে থাকবো’: কাদের সিদ্দিকী

১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে অটল আওয়ামী লীগ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরতার নির্দেশ ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে অটল আওয়ামী লীগ

ইউএনডিপিকে সতর্ক করে চিঠি পাঠালো আওয়ামী লীগ

নির্বাচনী কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ইউএনডিপিকে সতর্ক করে চিঠি পাঠালো আওয়ামী লীগ

বিএনপির প্রার্থী তালিকার বেশিরভাগই ‘গডফাদার’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বিএনপির প্রার্থী তালিকার বেশিরভাগই ‘গডফাদার’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে নুরের অভিযোগ সমর্থন করলেন রাশেদ খান

‘৫০০ টাকায় ভোট বিক্রির’ সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে নুরের অভিযোগ সমর্থন করলেন রাশেদ খান

এবার জামায়াত নিষিদ্ধের আহ্বান জানালেন বিএনপি নেতা আলাল

‘একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ’ এবার জামায়াত নিষিদ্ধের আহ্বান জানালেন বিএনপি নেতা আলাল