অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেছেন, পাহাড় ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ঘটলেই সরকারগুলো একই ধাঁচে প্রতিক্রিয়া দেখায়, “ষড়যন্ত্র” বলেই দায় এড়িয়ে যায়, কখনোই সঠিক তদন্ত হয় না। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এসব ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা থাকে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতন্ত্র অধিকার কমিটি আয়োজিত “সহিংসতার কালক্রম: রামু বৌদ্ধমন্দির হামলার ১৩ বছর এবং গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশের সহিংসতা” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “রামুর ঘটনার সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেন। আজ খাগড়াছড়িতে আগুন জ্বলছে, আর বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন এটি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’। সরকারের এই অস্বীকারের ধারা একই—তদন্ত হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “সহিংসতা কখনো স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়। যারা ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলিম’ স্বার্থের নামে হামলা চালায়, তারা প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক-শ্রমিকের নয়, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি দাবি করেন, ভূমি ইজারা কারা নিয়েছে সেই তালিকা প্রকাশ করা হোক। “এতে বোঝা যাবে পাহাড় অশান্ত রাখার মাধ্যমে কারা লাভবান হচ্ছে।”
আলোচনায় ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ২০১২ সালের রামু হামলার ১৩ বছর পরও অধিকাংশ মামলার বিচার হয়নি। সে সময় অন্তত ১৯টি মামলা হয়েছিল, কিন্তু বেশিরভাগের তদন্তই অসম্পূর্ণ। তার অভিযোগ, হামলার সময় নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত থেকেও প্রতিরোধ করেনি।
তিনি আরও উদাহরণ দেন, রংপুরে এক মুসলিম ব্যক্তি ঋণ শোধ করতে না পেরে প্রতিশোধের বশে একটি হিন্দু পরিবারকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। গুজব ছড়িয়ে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। “প্রায় সব ঘটনায়ই মূলধারার রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে,” বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘৃণাবাদী বক্তব্য “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা”র আড়ালে আরও উগ্র হয়ে উঠেছে, যা সাংস্কৃতিক ও পরিচয়ভিত্তিক সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে।
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কাফি রতন বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও কোনো সরকার প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিকভাবে দেশ চালায়নি। তার মতে, “দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থান ছাড়া জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে না।”
গায়ক ও লেখক অরূপ রাহি বলেন, রামু থেকে খাগড়াছড়ি—সব ঘটনাই রাষ্ট্র ও দক্ষিণপন্থী মতাদর্শের এক যৌথ রূপ, যা এক ধরনের নতুন ফ্যাসিবাদ তৈরি করছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ সুজিত চৌধুরী। আলোচনা পরিচালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু।