রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেছেন, দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট ও উদীচীর ওপর হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে সরকার হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছে বা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, হামলাকারীদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তারা যখন আগুন দিচ্ছিল ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত থাকলেও নিষ্ক্রিয় ছিল। “উপর থেকে নির্দেশ কেন আসেনি?”—এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া আছে, তবুও তারা নীরব ছিল। এতে মনে হয়েছে রাষ্ট্র ও সরকার হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, এই ঘটনাগুলো আকস্মিক নয়। গত কয়েক মাস ধরে সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে, আক্রমণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার অজানা থাকার কথা নয়। তিনি উল্লেখ করেন, হামলাকারীরা গত দেড় বছর ধরে সাংস্কৃতিক জগৎ, মাজার, সংখ্যালঘু ও নারীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতের হামলাকে তিনি ‘পরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, শুধু হামলাই হয়নি, গুরুত্বপূর্ণ নথি, বাদ্যযন্ত্র, কম্পিউটার ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ ধ্বংস ও লুট করা হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টার ভবনে ২০–২৫ জন সাংবাদিক জীবননাশের ঝুঁকিতে আটকা পড়েছিলেন। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরও হামলার শিকার হন।
ছায়ানট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি শুধু একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের অংশ। জনগণের অর্থে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানের সংগীত শিক্ষা, শিশু বিদ্যালয় ও গ্রন্থাগার ধ্বংস করা হয়েছে। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত।
আনু মুহাম্মদ বলেন, জনস্বার্থ রক্ষায় সরকার নিষ্ক্রিয়, অথচ বিদেশি ও করপোরেট স্বার্থে চুক্তি করতে তারা সক্রিয়। এটি সরকারের ভেতরে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও করপোরেট ফ্যাসিবাদের মিলনের প্রমাণ।
তিনি শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ঐক্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার একমাত্র পথ।”
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ ও কাটাবান ঘুরে উদীচী কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।