বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে এককভাবে সরকার গঠন করবে—এ বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা জয়ী হবো। আমরা জোরালোভাবে বিশ্বাস করি যে এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থায় রয়েছি।”
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটানো তারেক রহমান জানান, তিনি দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। “আমি মনে করি, আমার বাংলাদেশে ফেরার সময় খুব সন্নিকটে,” বলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার ‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসনের পতন না ঘটলে দেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব ছিল না। তিনি বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন এখনো অসম্পূর্ণ, যা একটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।
ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পরবর্তী সরকারকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত তৈরি পোশাক খাত এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনমন মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষিদ্ধ করেছেন। আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত। এসব দলের মধ্যে রয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি নতুন রাজনৈতিক দল, যাদের তিনি “তরুণ, ভবিষ্যতবান” হিসেবে স্বাগত জানান।
তারেক রহমান ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন, ইবে ও আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে ‘সরবরাহ কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেন। তিনি তৈরি পোশাকনির্ভর অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার ওপর জোর দেন।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, “সব কিছুর আগে বাংলাদেশ” নীতির ভিত্তিতে নতুন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করবেন। শেখ হাসিনার সময়কার সম্পর্ককে তিনি ‘একপক্ষীয়’ বলে অভিহিত করেন এবং তা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের প্রশাসনের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের আওতায় থাকবে।
তবে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে কি না—এ প্রশ্নে তিনি সরাসরি উত্তর দেননি। ফিন্যানশিয়াল টাইমস বলেছে, আওয়ামী লীগের এখনো জনসমর্থন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং বিরোধী মত দমনের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত আগস্ট থেকে দলের ভেতরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাত হাজার সদস্যকে বহিষ্কার বা সতর্ক করা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, বিএনপি সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।