প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলায় অনুপস্থিতিতে দুই বছরের কারাদণ্ডের রায়কে “ত্রুটিপূর্ণ, সাজানো ও প্রহসনমূলক” বলে অভিহিত করেছেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। রায় ঘোষণার পর ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ও স্কাই নিউজকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, পুরো বিচারপ্রক্রিয়াই ছিল “ক্যাঙ্গারু কোর্টের মতো বিশৃঙ্খল এবং অযৌক্তিক”।
টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, “এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক। এই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক রায় আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল।” তিনি অভিযোগ করেন, “দেড় বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষমূলক অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”
তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত আইনজীবীরা বারবার বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও কোনো জবাব মেলেনি। পরে বাংলাদেশে আইনজীবী নিয়োগের চেষ্টা করলে তাকেও “হুমকি ও ভয় দেখানো হয়” এবং মামলা থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়।
মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে টিউলিপ বলেন, এই রায় “ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ”। তার ভাষায়, “এমন বিচারপ্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার লজ্জিত হওয়া উচিত। তিনি আমাকে হেনস্থা করছেন এবং একজন নির্বাচিত ব্রিটিশ এমপিকে বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতিতে টেনে আনছেন।”
গত জুনে লন্ডন সফরকালে ইউনূসকে দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে জানান টিউলিপ। “আমি তাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসতে, ভুল বুঝাবুঝি দূর করতে। কিন্তু তিনি দেখা করতে রাজি হননি।”
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের আদালত থেকে কোনো সমন বা নথি কখনো তার কাছে পাঠানো হয়নি। “আমাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। আমি সংসদ সদস্য, হাউস অব কমন্সে কয়েকটি কাগজ পাঠালেই যথেষ্ট ছিল,” মন্তব্য তার।
টিউলিপ বলেন, “আমি যেন কাফ্কার দুঃস্বপ্নে আছি। এদিকে পার্লামেন্টারি কাজ করছি, ওদিকে আমাকে বাংলাদেশে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে এবং আমি রায়ের খবর জানছি সংবাদপত্রে।”
যে মামলায় তার সাজার রায় এসেছে, তাতে অভিযোগ—ঢাকায় আবাসন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সেই তথ্য গোপন করে তার মা শেখ রেহানা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেন। এ প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করেছেন এবং টিউলিপ সিদ্দিক ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ খাটিয়েছেন।
এই অভিযোগকে “হাস্যকর” আখ্যা দিয়ে টিউলিপ বলেন, “আমার খালা শেখ হাসিনা আমার জন্মের আগে থেকেই রাজনীতিতে। তাকে আমি কীভাবে প্রভাবিত করলাম তার কোনো প্রমাণ নেই।”
ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরাও মামলাটিকে “সাজানো, কল্পিত ও অন্যায্য” বলে মন্তব্য করেছেন বলে তিনি জানান। লেবার পার্টিও জানিয়েছে তারা এই রায়কে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, কারণ অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে টিউলিপকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সাজা হওয়ায় পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করবেন কি না প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ বলেন, “এ মুহূর্তে পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই আসে না।”
তার অভিযোগ,“আমার পরিবারকেও টার্গেট করা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে আমার খালাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।”