বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দৃঢ়তার সাথে নাকচ করেছেন। গত বছরের জুলাই দাঙ্গার সময় সহিংসতার ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে চলমান বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগে বিবিসিকে দেওয়া এক ইমেইল সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আইনি প্রক্রিয়াবহির্ভূত।
২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বিবিসিতে এটিই তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য। তিনি বলেন, তার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চলায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার বা আইনজীবী নিয়োগের সুযোগই তিনি পাননি। তার ভাষায়, “এই আদালত প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ যেখানে রায় পূর্বনির্ধারিত।”
রাষ্ট্রপক্ষ ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে। শেখ হাসিনা খোলাসা করে বলেন, পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ তিনি কখনো দেননি। আন্দোলনের সময় অপ্রয়োজনে মানুষ মারা গেছে, তা তিনি নাকচ করেননি কিন্তু তা “সংগঠিত পরিকল্পনার অংশ ছিল না” বলে নিশ্চিতও করেন।
বিবিসি আই যাচাই করা একটি ফোনালাপের অডিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অডিওটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মন্তব্য, “যা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।”
এ বছরের জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এসব মামলাও একই রাজনৈতিক চাপে পরিচালিত। আওয়ামী লীগকে “চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্ন” করার লক্ষ্যেই তার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি তার শাসনামলে বেআইনি আটক, নিখোঁজ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানান, “কোনো কর্মকর্তার অপব্যবহারের প্রমাণ থাকলে তা নিরপেক্ষ তদন্তে যাচাই করা উচিত কিন্তু তার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
তিনি আরও বলেন, তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব মামলা চলছে সেগুলিও রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক। তার আইনজীবীরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘে জরুরি আপিল দিয়েছেন, যেখানে ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।
আগামী সোমবারের রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন তড়িঘড়ি করে যেনতেনভাবে দেওয়া এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
শেখ হাসিনা আত্মবিশ্বাসী যে, সত্য শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। তার মতে, “ইতিহাসই নির্ধারণ করবে, এই বিচার ন্যায়সংগত ছিল কি না।”