বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য নির্বাচনি জোটকে ‘তারুণ্যের রাজনীতির কবর’ আখ্যা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। তাঁর দাবি, এই জোটের মধ্য দিয়ে কার্যত এনসিপি জামায়াতের রাজনৈতিক ছায়ায় বিলীন হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক পোস্টে আব্দুল কাদের এসব অভিযোগ করেন। তিনি লেখেন, এনসিপি সরাসরি জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়ে সারা দেশের তরুণ কর্মী ও সমর্থকদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। তাঁর মতে, গুটিকয়েক নেতার ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্যই এমন ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হয়েছে।

পোস্টে তিনি দাবি করেন, শুরুতে এনসিপি জামায়াতের কাছে ৫০টি আসন দাবি করলেও দরকষাকষির শেষ পর্যায়ে সেটি ৩০ আসনে নেমে এসেছে। সমঝোতা অনুযায়ী, এনসিপি বাকি প্রায় ২৭০ আসনে কোনো প্রার্থী দেবে না এবং সেসব আসনে জামায়াতকে নির্বাচনি সহায়তা করবে।
আব্দুল কাদের আরও অভিযোগ করেন, জোটের অংশ হিসেবে জামায়াত আসনপ্রতি এনসিপিকে দেড় কোটি টাকা করে নির্বাচনি ব্যয় দেবে। তিনি দাবি করেন, সমঝোতার ৩০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের হাতে থাকবে।
পোস্টে আরও বলা হয়, পশ্চিমা শক্তিগুলো সংসদে জামায়াতকে প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেখতে চায় না—এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই নাহিদ ইসলামকে সামনে আনার কৌশল নির্ধারিত হয়েছে। আব্দুল কাদেরের ভাষায়, নির্বাচনে জিতলে নাহিদ ইসলাম প্রধানমন্ত্রী হবেন, আর বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন।

তিনি লেখেন, “এত তরুণ নিজের সাজানো জীবন ছেড়ে দেশের হাল ধরতে এসেছিল, একটা সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখেছিল। নাহিদ ইসলামরা সেই স্বপ্ন গতরাতে মাটিচাপা দিয়ে এসেছে।”
এদিকে এনসিপি–জামায়াত জোট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জনের মধ্যেই দল দুটির নেতারাও আলোচনা চলার কথা স্বীকার করেছেন। জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “এনসিপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। জোট হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবও জানিয়েছেন, এক-দু’দিনের মধ্যেই জোট নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। তবে তিনি বলেন, এখনো সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই জোটকে ‘আত্মঘাতী’ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আলোচনা চললেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, জুলাই দাঙ্গার পর তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এনসিপি ইতোমধ্যে শতাধিক আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং গত ৭ ডিসেম্বর তিন দলের সমন্বয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করেছিল। সেই জোট গঠনের তিন সপ্তাহ না যেতেই জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার খবর সামনে এলো, যা দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।