কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজধানীতে আবারও মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রোববার বেলা পৌনে ২টার দিকে সংসদ ভবন এলাকার বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের নিচ থেকে একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি সংসদ ভবনের রাস্তা ধরে খামারবাড়ি গিয়ে শেষ হয়। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন।
তিনি বলেন, “দুপুর পৌনে ২টার দিকে আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের পাশ থেকে খামারবাড়ির দিকে মিছিল করে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ খবর পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সিরাজুল ইসলামকে ব্যানারসহ আটক করেছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ ফয়সাল জানান, প্রায় এক হাজার লোক মেট্রোরেলের মোড় থেকে খামারবাড়ির দিকে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যায়। তারা ‘শেখ হাসিনা আসবে, রাজপথ কাঁপবে’, ‘জয়বাংলা’সহ শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিতে থাকে।
মিছিলে অংশ নেওয়া মাদারীপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এখানে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছে। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কেউ ভালো নেই। অচিরেই সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নামবে।”
ঢাকায় ধারাবাহিক মিছিল
শুক্রবার জুমার নামাজের পরও তেজগাঁও নাবিস্কো এলাকায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল হয়েছে। এর আগে ৩১ অগাস্ট ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড থেকে শংকরের বাংলাদেশ আই হসপিটাল পর্যন্ত মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। আগস্টের শেষ সপ্তাহে গুলিস্তান বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ করেছিলেন।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তিন দিন পর ৮ অগাস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হন এবং বাকিরা আত্মগোপনে চলে যান। সরকারের নির্দেশনায় দলটির সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত মিছিল করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সরকারের কঠোর নির্দেশনা
রোববার দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় মিছিল চলাকালে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সমাবেশ মোকাবিলায় কঠোর বার্তা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলসহ সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বলা হয়, জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে “পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি” মরিয়া হয়ে উঠছে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। এটিকে কেবল আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, “দেশের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় হয়ে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
মিছিল ঠেকাতে ধরপাকড়, কিন্তু দমে যায়নি কর্মীরা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের মিছিলের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। পুলিশের ধরপাকড় চললেও নেতাকর্মীরা দমে যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি করছেন অংশগ্রহণকারীরা। সরকারের কঠোর বার্তা আসলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।