খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণ এবং পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় নীরব থাকার অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় নেতা অলিক মৃ পদত্যাগ করেছেন। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।
অলিক মৃ ফেসবুকে লিখেছেন, “খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণ, আদিবাসীদের ওপর হামলা, তাদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং তিনজন আদিবাসীকে হত্যার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নীরবতা আমাকে ব্যথিত করেছে। উপরন্তু ধর্ষণ নিয়ে এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে আমি এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) পদ থেকে পদত্যাগ করছি। পার্টির ইমেইল ও দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। এনসিপির জন্য শুভকামনা। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।”
পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, একটি রাজনৈতিক দলের নৈতিক অবস্থান সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হয় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে। খাগড়াছড়ির মতো ভয়াবহ ঘটনায় নীরবতা রাখা এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ না করাকে তিনি অমানবিক বলে আখ্যায়িত করেন।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় অন্তত চারজন আদিবাসী নিহত হন। এসব ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে—এনসিপি কার্যত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের "অঘোষিত ক্ষমতাসীন" দল। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও প্রায়ই উল্লেখ করেন, এনসিপি-ই তাঁর নিয়োগকর্তা। তাই এমন ভয়াবহ ঘটনায় তাদের নীরবতা আরও সন্দেহ ও প্রশ্ন তৈরি করেছে। দলটি নিজেকে মধ্যপন্থী দাবি করলেও তাদের কর্মকাণ্ড ও নেতাদের বক্তব্যে সহজেই বোঝা যায়, এনসিপি কার্যত ডানপন্থামুখী রাজনৈতিক দল।
অলিক মৃ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উত্তরাঞ্চলে এনসিপির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আদিবাসী সম্প্রদায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে তিনি সরব ছিলেন। তাঁর পদত্যাগ রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা শুধু ভুক্তভোগী নয়, গোটা সমাজের জন্য হতাশাজনক বার্তা বহন করে। তারা ন্যায়বিচারের দাবিতে দলগুলোকে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।