জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ‘বিচারের’ আওতায় আনতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত পৌনে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। এটি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার প্রশ্ন নয়, বরং রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ‘জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে’ সেনাবাহিনীর সাহসী সদস্যরা, বিশেষ করে তরুণ অফিসার ও সৈনিকরা, জনগণের পাশে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা ও পুনর্গঠনের কাজে সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। তবে, সংস্কার ও ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই এর ঊর্ধ্বে নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত শাসনামলে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছিল, যার প্রভাব সেনাবাহিনীতেও পড়েছিল। কিছু কর্মকর্তা, বিশেষ করে র্যাব ও ডিজিএফআই–এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা গুম, খুন, ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এমনকি জুলাইয়ের ‘গণঅভ্যুত্থানের’ সময়ও ‘নিরস্ত্র’ জনগণের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে।
নাহিদ বলেন, “এই ভয়াবহ বাস্তবতা গণতন্ত্রের ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক দলীয়করণের সংস্কৃতি থেকে এসেছে। এখন আমাদের সামনে ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে সেনাবাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে পুনর্গঠন করার। তাহলেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই না বিচারব্যবস্থা ও সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে যাক। ষড়যন্ত্রকারীরা চায় এমন সংঘাত হোক, যাতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। আমরা রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপ চাই না, আবার সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক প্রভাবও চাই না। দেশপ্রেম, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা হওয়া উচিত।”
পোস্টের শেষে নাহিদ ইসলাম লিখেন, “আমরা ৫ আগস্ট থেকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ঐক্য রক্ষায় কাজ করছি। গণতান্ত্রিক সংস্কারে অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু ন্যায়বিচার ও সংস্কারের পথ এখনো চলমান। আমাদের লক্ষ্য দুর্নীতি, দমননীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।”