বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন যে, দলটির বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন, কাদের গণি চৌধুরীসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, “এই নির্বাচনে বিএনপি হেরে গেছে, এটা আপনারা বলতে পারেন। কিন্তু আমি বলতে পারি না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর এত ভোট কোথা থেকে এলো। আমার হিসাবে মেলে না। আমি সরাসরি বলতে চাই না কারচুপি হয়েছে, তবে একটা গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি।”
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী গোপনে আঁতাত করে ডাকসু নির্বাচনে ভোটের ফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট জামায়াত নিয়ে নিয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অথচ বিএনপিই একমাত্র দল, যার হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ।”
জামায়াতকে ‘মোনাফেকের দল’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে একই ধরনের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ হয়েছিল। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে চাইলে না, কিন্তু জামায়াতের নেতাদের চাপে বিএনপি অংশ নেয়। “ফল হয়েছে ভয়াবহ। জামায়াতের নেতারা ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন, আর বিএনপি থেকেও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো নেতাকে হারাতে হয়েছে।”
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ বাইরে থেকে জামায়াতকে ব্যবহার করে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের আঁতাতের ফলে বিএনপির উপর সব দোষ চাপানো হচ্ছে। অথচ বিএনপি স্পষ্ট বলেছে—দলে কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদারের জায়গা হবে না। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নির্বাচিত ডাকসু নেতাদের স্বাগত জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “যেভাবেই হোক, তারা নির্বাচনে জয় পেয়েছে। আমি এই কমিটিকে অভিনন্দন জানাই। আশা করি তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করবে।”
প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “নোমান ভাই ছিলেন সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক। দল ও দেশের জন্য তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি, যা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।”
সভায় আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বলেন, “আমার বাবা কখনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আপোষ করেননি। বিএনপির প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা ও নিষ্ঠা ছিল, আমরা সেটি ধরে রাখতে চাই। ষড়যন্ত্র নয়, ঐক্যই হতে পারে আমাদের শক্তি।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।