বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ‘গুরুতর আশঙ্কা’ প্রকাশ করেছেন দুই ব্রিটিশ আইনজীবী। লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের স্টিভেন পাওলস কেসি ও তাতিয়ানা ইটওয়েল সম্প্রতি জাতিসংঘের কাছে এই আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনটি শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে চলমান ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘন হওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছে। বিশেষ করে তারা জোর দিয়ে বলেছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রাধান্য পাচ্ছে এবং এটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, যাদের জনসাধারণের কোনো ম্যান্ডেট নেই।
দুই আইনজীবী জাতিসংঘের বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ দূতের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে তার অনুপস্থিতিতেই এবং তাকে আনুষ্ঠানিক কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে, যেসব আইনজীবী অতীতে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন বা দলটির সঙ্গে যুক্ত, তাদের ওপরও হামলা ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচার করছে, কিন্তু যারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করেছে, তাদের অপরাধ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আইসিসিপিআরের অনুচ্ছেদ ১৪(১) অনুযায়ী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার হওয়ার অধিকার শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে মানা হয়নি। বিচারকদের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার অভিযোগও আবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে একাধিক অভিযোগ জানিয়েছে। দলটি মানবতাবিরোধী অপরাধ, নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে। গত মাসে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত–আইসিসিতেও একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক নিপীড়ন, গুম, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করা, অপরাধীদের দায়মুক্তি’ ও সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
দুই ব্রিটিশ আইনজীবী আরও উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের মতো কোনো সাজা হলে তা আইসিসিপিআরের অনুচ্ছেদ ৬ অনুযায়ী জীবনের অধিকার লঙ্ঘন হবে। তারা জাতিসংঘকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে পরিচালিত হয়।