প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং এর সঙ্গে সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এই হামলার পেছনে রাজনৈতিক ব্যাকআপ ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে সমাজে এ ধরনের সহিংসতার পক্ষে সম্মতি তৈরি করা হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সম্পাদক পরিষদ ও নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত যৌথ প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, তারা জুলাই আন্দোলনের স্লোগানকে ব্যবহার করেছে এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের স্লোগানগুলো ব্যবহার করে আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং সেটার পক্ষে সম্মতি তৈরি করা হয়েছে। সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা, রাজনৈতিক ব্যাকআপ এবং সমাজে আগে থেকেই তৈরি করা সম্মতি—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে না থাকলে এমন হামলা সম্ভব হতো না।”
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ সরাসরি জড়িত ছিল না; বরং এটি ছিল একটি সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত অপরাধ। জুলাই আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, দেশ সেই পথে এগোচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির একটি পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত ছিল বলে দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে মনে হয়, কী ঘটবে—তা আগেই ঠিক করা ছিল। জুলাই অভ্যুত্থান কিংবা শরিফ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, তা আমাদের জন্য গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক।”
তিনি স্বীকার করেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদেরও এ বিষয়ে দায় রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সময় নিজের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন নাহিদ।
মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুরুতে তিনি এই শব্দ ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন এটি আর স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ নয়, বরং একটি পরিকল্পিত অপরাধে রূপ নিয়েছে, যার লক্ষ্য দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “কারা এই ঘটনার পক্ষে সম্মতি তৈরি করেছে, কারা সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল—সবই স্পষ্ট। সরকারকে বাধ্য করতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে।” একই সঙ্গে শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনারও দ্রুত সুরাহা দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা, গণমাধ্যমে হামলা বা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না এবং এসবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।