আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকেই সড়কে গণপরিবহন সীমিত, যাত্রীসংখ্যা কম, নগরজুড়ে নীরব স্থবিরতা বিরাজ করছে।
রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, ফার্মগেট, সায়েন্সল্যাব ও কারওয়ানবাজার এলাকায় সকাল থেকে যানবাহনের তীব্র সংকট দেখা গেছে। কোথাও বাসের দেখা মেলেনি, অফিসগামী যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পরিবহন পাননি। অল্প কিছু অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চললেও ভাড়া ছিল কয়েকগুণ বেশি।
রাজধানীর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “আজ রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা সাধারণ দিনের তুলনায় অন্তত ৬০ শতাংশ কম। চালকরা ভাঙচুর বা সংঘর্ষের আশঙ্কায় গাড়ি নামাচ্ছেন না।”

ফার্মগেট, শাহবাগ, মতিঝিল ও উত্তরা অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, “অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় সন্তানকে আজ স্কুলে পাঠাইনি।”
দূরপাল্লার বাস চলাচলও ছিল প্রায় বন্ধ। গাবতলী টার্মিনালে যাত্রী সংকটে সকাল থেকে বেশিরভাগ বাস ছাড়তে পারেনি। গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারম্যান আলী আজগর জানান, “সাধারণত সকাল ৮টার মধ্যে পাঁচটি বাস ছাড়ে, আজ মাত্র একটি ছাড়তে পেরেছি—সেটাও অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে।”
অন্যদিকে, সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কড়া উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেনাবাহিনীর টহলও বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এর মধ্যেই দুপুরে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ ব্যানারে ১০-১৫ জনের একটি দল ভবনের চতুর্থ তলায় কাঠ ও কাগজ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হুসাইন মুহাম্মদ ফারাবী বলেন, “ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে একটি গ্রুপ আগুন দিয়েছে ও ভাঙচুর চালিয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একই ভবনে আগুন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তখন থেকে ভবনটি আংশিক পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এ ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি ভিডিও বার্তায় ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং ১৩ নভেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘ঢাকা লকডাউন’ পালনের আহ্বান জানান।

সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচিটিকে ‘অবৈধ ও উসকানিমূলক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ কয়েকটি দল আওয়ামী লীগ ঠেকাতে মাঠে রয়েছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না দিলেও যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর একাধিক এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঝটিকা মিছিল, টায়ার পোড়ানো ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। গত কয়েকদিনে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ১০টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী লীগের ওপর চাপালেও, দলটির নেতারা সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দিনের শেষ ভাগে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু হবে বলে প্রশাসন আশা করলেও, সাধারণ মানুষ ঘরেই অবস্থান করছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে জানান, “দেশে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানাতেই তারা ঘরে ছিলেন।”
রাজধানীর নীরব রাস্তায় তাই বৃহস্পতিবারের দিনটি ছিল রাজনৈতিক বার্তার—জনগণ আস্থার প্রতীক হয়ে ঘরে থেকে আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।