বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ নানা অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা চলমান। তবে একটি বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই প্রমাণহীন, প্রসঙ্গভ্রষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজানো; এমনকি কয়েকটি অভিযোগের নির্মাণশৈলীই হাস্যকর, যা ন্যায়বিচারের মানদণ্ডে টিকতে পারে না।
বিশ্লেষণে বলা হয়, আন্দোলন-কেন্দ্রিক সহিংসতার দায় ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার ওপর চাপালেও এই দায় নির্ধারণে প্রাথমিক শর্ত—কার্যকর কমান্ড দায়িত্ব, নীতিগত নির্দেশনা, প্রতিরোধযোগ্যতা—কোনোটিই প্রমাণিতভাবে উপস্থাপিত হয়নি। বরং বিচ্ছিন্ন ঘটনার বর্ণনা ও আবেগ-ভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে “মানবতাবিরোধী অপরাধ” শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে, যা প্রমাণ-নির্ভর বিচার কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভিডিওতে দেখানো হয়:
- অভিযোগপত্রে ঘটনার কালক্রম ও দায়-শৃঙ্খলা অস্পষ্ট; কোথায়, কখন, কার নির্দেশে কী ঘটেছে—এসব মৌলিক প্রশ্নের দৃঢ় উত্তর নেই।
- মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত, অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ ও নীতিগত নির্দেশনার পার্থক্য না মেনে দায়কে ব্যক্তির ওপর আরোপ করা হয়েছে।
- সাক্ষ্য-প্রমাণের মূল্যায়নে উৎস যাচাই ও ক্রস-রেফারেন্সের ঘাটতি রয়েছে; কিছু উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সেগুলোকে চূড়ান্ত প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণে ধারাবাহিকতা, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্দেশে সহিংসতার প্রমাণ এবং কমান্ড চেইনে স্পষ্ট দায় দেখাতে হয়। ভিডিওটি দাবি করে, এই তিন স্তরেই মামলার উপস্থাপনায় গুরুতর ঘাটতি আছে। ফলে অভিযোগগুলো “শো ট্রায়াল” ধরনের নাটকীয় ভাষা ও আবেগনির্ভর বয়ানে দাঁড়িয়ে আছে—যা আইনের কাঠামোয় গ্রহণযোগ্য নয়।
ভিডিওতে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, প্রশাসনের নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বা অপারেশনাল সিদ্ধান্তকে “মানবতাবিরোধী অপরাধ” হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনা, কাঠামোগত নিপীড়ন বা সুসংহত নীতির প্রমাণ জোড়া হয়নি। একইভাবে, পরোক্ষ বা অনুমান-নির্ভর বক্তব্যকে প্রত্যক্ষ প্রমাণের মর্যাদা দিয়ে অভিযোগ বানানো হয়েছে, যা বিচারশাস্ত্রে হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য।
বিশ্লেষণে বলা হয়, দীর্ঘ শাসনকালীন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে “বিচার বয়ান”-এ রূপ দিয়ে নেতিবাচক ইমেজ নির্মাণের চেষ্টা হয়েছে। অভিযোগের ফ্রেমিংয়ে নির্বাচনী রাজনীতি, জনমত উত্তেজনা এবং ক্ষমতাচ্যুতির পরবর্তী অভ্যন্তরীণ মেরুকরণকে কাজে লাগানো হয়েছে—প্রমাণের ঘাটতি ঢাকতে আবেগ ও নৈতিক ক্রোধকে প্রাধান্য দিয়ে। এ প্রক্রিয়া ন্যায়বিচারের বদলে প্রোপাগান্ডা-ধর্মী বিচারধারা তৈরির লক্ষণ দেখায়।
এতে আরও বলা হয়, এই ধরনের অভিযোগপত্র জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতাকে দুর্বল করে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের অভিযোগ তুলে ভিডিওটি যুক্তি দেয়, প্রমাণ-ভিত্তিক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত ছাড়া এই মামলা ন্যায়বিচারের মানদণ্ডে দাঁড়ায় না। ফলে অভিযোগের “হাস্যকর” চরিত্র—বিযুক্ত প্রমাণ, আবেগ-নির্ভর উপস্থাপনা, এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যা—প্রাধান্য পায়।
তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তির ভিত্তিতে বলা যায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো কাঠামোগতভাবে দুর্বল, প্রমাণগতভাবে অপর্যাপ্ত এবং ভাষাগতভাবে নাটকীয়—যা ন্যায়বিচারের কঠোর মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য। বিচারকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে স্বাধীন তদন্ত, উৎস যাচাই, ক্রস-রেফারেন্স এবং কমান্ড দায়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রয়োজন। তা না হলে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক নাট্যরূপেই থাকবে, ন্যায়বিচারের কঠিন পরীক্ষায় নয়।