সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনে জামায়াত–শিবিরের ভূমিধস জয়ের রহস্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। এবার নুরের সেই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে সমর্থন জানালেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। শুক্রবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি প্রকাশ্যে নুরের অবস্থানকে সমর্থন করেন।
রাশেদ খান লিখেছেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে নুরুল হক নুর যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার বক্তব্যের শতভাগ সমর্থন করছি। তিনি কোনো ভুল বলেননি। তিনি তুলে ধরেছেন বাস্তবতা, গ্রামে যেভাবে মানুষ ৫০০-১০০০ টাকায় ভোট বিক্রি করে, ঠিক তেমনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স’ দিয়ে বিভ্রান্ত করা হলে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন কীভাবে হবে?”
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন-সংগ্রাম, কারাবরণ, ক্যারিয়ার বিসর্জন দেওয়া নেতৃত্বরা ভোট পেল না কেন? কেন বরং তুলনামূলক অচেনা বা অজানা মুখগুলো জিতল? তার ভাষায়, “পরিচিত সংগ্রামী নেতৃত্ব যদি অজানা ছেলেদের কাছে হেরে যায়, তবে সেটি রাজনীতির প্রতি অনুত্সাহ, এবং ছাত্র রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টার অংশ।”
জামায়াত–শিবিরের বিনিময় রাজনীতি নিয়ে রাশেদ খানের সমালোচনা
রাশেদ খানের অভিযোগ, শিবির দীর্ঘদিন ধরে ‘ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স’ এর নামে বিনিময়ভিত্তিক রাজনীতি করে শিক্ষার্থীদের মন জয় করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “বৃত্তি, পানির ফিল্টার, সেহরি-ইফতার, কুরবানির মাংস, হাসপাতালে ডিসকাউন্ট—এভাবে অর্থ ছড়িয়ে মানুষের আর্থিক দুর্বলতাকে ব্যবহার করে তারা রাজনীতি করছে।”
তার দাবি, যদি এসব বন্ধ না হয়, তাহলে রাজনীতিতে অর্থই জয়ী হবে, আদর্শ নয়। তিনি প্রশ্ন করেন, “যেহেতু জামায়াত-শিবির কালোটাকার রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে ওয়েলফেয়ারের নামে অর্থ ছড়ানোর রাজনীতি তারা করছে কেন? যদি বন্ধ না করে, তবে এটা প্রমাণিত হবে যে মানুষের আর্থিক দুর্বলতাকে পুঁজি করাই তাদের রাজনৈতিক কৌশল।”
নুরের বক্তব্য ও চার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের জয়কে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা
শনিবার ঢাকায় এক সংলাপে নুর দাবি করেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদে শিবিরের ভূমিধস জয় হয়েছে, যা “রহস্যজনক”। তার মতে, প্রকাশ্যে পরিচয় না দেওয়া, নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা একটি সংগঠন কীভাবে এভাবে বিজয়ী হলো, তা তদন্তসাপেক্ষ।
তিনি আরও বলেন, “যারা দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেবে, যারা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাবে, তারাই যদি ৫০০-১০০০ টাকার মতো বিনিময়ে ভোট দেয়, তাহলে সংসদ–রাজনীতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়–সব জায়গায় অযোগ্য নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠা পাবে।”
ঐ সংলাপে বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ অন্যরাও বক্তব্য রাখেন।