বাংলাদেশে বহুল আলোচিত পূর্বাচল ‘প্লট দুর্নীতি’ মামলায় ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে ২ বছরের ‘কারাদণ্ড’ দিয়েছেন ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালত। সোমবার বিচারক রবিউল আলম ঘোষিত রায়ে টিউলিপের মা শেখ রেহানাকে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দে ‘দুর্নীতির’ দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং টিউলিপের খালা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় অন্যান্য আসামিদেরও ৫ বছর করে সাজা ঘোষণা করা হয়।
টিউলিপ সিদ্দিক এ মামলার পাশাপাশি তার ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর প্লটসহ আরও কয়েকটি ‘দুর্নীতি মামলার’ও আসামি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পূর্বাচলের তিনটি আলাদা ‘প্লট দুর্নীতি’ মামলায় শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দেন আরেকটি আদালত। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
২০২৫ সালের শুরুতে, যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার (আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী) থাকা অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পেয়েছেন—এমন খবর প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ গণমাধ্যমে। এর পরপরই সমালোচনার মুখে তদন্তের নিরপেক্ষতার স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করেন। যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত কমিশন টিউলিপকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে। পাশাপাশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগেও তার নাম জড়িয়ে অভিযোগ আনে অন্তর্বর্তী সরকার।
দুদক জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে তার মা-বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গুলশানের একটি ফ্ল্যাট বোন রূপন্তীর কাছে হস্তান্তর করেন। ওই হস্তান্তরের নোটারি দলিলটি ‘ভুয়া’ বলে দাবী করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই তথ্যই পরবর্তীতে দুর্নীতির মামলার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি বানানো হয়।
এপ্রিলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর টিউলিপের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, দুদক ‘প্রামাণিক নথি’ উপস্থাপন করেনি এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দাবি, এতে টিউলিপ সিদ্দিকের ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
এদিকে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন প্রশ্ন তোলেন—টিউলিপ নির্দোষ হলে পদত্যাগ করলেন কেন, অথবা কেন আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন? যদিও একথা সর্বজন বিদিত যে, ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনীত হলে নিরপেক্ষতার স্বার্থে পদত্যাগ করেন, দোষী হোক বা না হোক। এবং, আইনি বিষয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে যোগাযোগ করাই নিয়মসিদ্ধ চর্চা।
২০১৫ সালে প্রথমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। পরের দুটি নির্বাচনেও জয়ী হয়ে তিনি লেবার পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে উঠে আসেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি সরকার গঠনের পর তিনি আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।