বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ক্ষমতাসীন না হলেও আপাত প্রভাবশালী তিন দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ তুলেছে।
বিএনপি প্রথমে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে প্রশাসন ও পুলিশে বদলি-পদায়নসহ নানা ক্ষেত্রে কিছু উপদেষ্টার “জামায়াতপন্থী ভূমিকা”র অভিযোগ জানায়। পরদিন বুধবার জামায়াত নেতারাও আলাদাভাবে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একই ধরনের অভিযোগ করেন তবে এবার তাদের লক্ষ্য ছিল বিএনপি ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা। এনসিপিও তাদের অভিযোগ তুলে ধরে বলেছে, বড় দুই দলের ‘ভাগ-বাঁটোয়ারায়’ প্রশাসনিক পদায়নে উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকে সহায়তা করা হচ্ছে।
বিএনপির অভিযোগ: প্রশাসনে ‘জামায়াতপন্থী’ প্রভাব
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে কয়েকজন উপদেষ্টার নাম সরাসরি উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির অভিযোগে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি প্রশাসন সম্পর্কিত কেবিনেট কমিটির সদস্য। বিএনপি আরও অভিযোগ করেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছেন।
এ ছাড়া বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকারের কয়েকজন তরুণ উপদেষ্টা বিশেষ করে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ। দলটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, তাদের অপসারণ করা হোক।
তবে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “যেহেতু বড় বড় দলই অভিযোগ করছে, তা হলে বোঝা যায় সরকার ঠিক পথেই চলছে।”
জামায়াতের পাল্টা অভিযোগ: বিএনপিপন্থী প্রভাব
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীও প্রশাসন ও পদায়ন নিয়ে আপত্তি জানায়। যদিও তারা নাম প্রকাশ করেনি, তবে দলের ভেতরের সূত্রে জানা যায়, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনের ভূমিকা নিয়ে আপত্তি রয়েছে। জামায়াত মনে করছে, প্রশাসনে বিএনপি ঘনিষ্ঠ প্রভাব তৈরি হচ্ছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “আমরা এখনই নাম বলিনি, তবে প্রয়োজনে জানাব। সরকারকে সতর্ক করেছি যেন নিরপেক্ষভাবে কাজ হয়।”
এনসিপির উদ্বেগ: কাঠামো পরিবর্তনের আশঙ্কা
এনসিপি নেতারা বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘কলেবর’ বা কাঠামো পরিবর্তনের আশঙ্কা তুলে ধরেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বড় দলগুলো প্রশাসনে ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে, যা উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও প্রভাবিত হচ্ছে।”
দলটির সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস তাদের নিশ্চিত করেছেন যে তার নেতৃত্বেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং উপদেষ্টা পরিষদের গঠন নিয়ে বড় পরিবর্তন আসছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপি ও জামায়াত একে অপরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে। ফলে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় উভয় দলই উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “দলগুলো প্রশাসনে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে। এই অভিযোগের রাজনীতি তাদের চাপ প্রয়োগের কৌশল।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়িয়ে নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও গভীর করতে পারে।