বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার আগে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশে অডিওবার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানালেন, তিনি রায়ের পরোয়া করেন না। কারণ, ‘আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, তিনিই নেবেন’। আওয়ামী লীগ আগামী দিনে বাংলাদেশে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে, ঘোষণা করেছেন হাসিনা।
গত বছর জুলাই মাসে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রবল সহিংসতা ঘটায় বিরোধী পক্ষ। প্রাণহানি থামাতে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে নির্বাসনে চলে যান। সেই থেকে ভারতেই আছেন। নিয়মিতই ভারত থেকে তিনি অডিওবার্তা দেন এবং দলীয় কর্মীদের সাথে সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছেন। আওয়ামী লীগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তা প্রকাশিত হয়। রবিবার রাতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে শেখ হাসিনা তেমনই একটি বার্তা দিয়েছেন। তুলোধনা করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে।
জুলাই মাসের দাঙ্গায় সরকার পক্ষের সাথে আন্দোলনের নামে সহিংসতাকারীদের সংঘর্ষে অন্তত দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে এমনটাই দাবী ইউনূস সরকারের। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। সরকারপক্ষ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ধারণা, আজ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হাসিনাকে দোষী সাব্যস্তই করবে। দেওয়া হতে পারে মৃত্যুদণ্ডও। সমর্থকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার বার্তা, ‘‘আমি বেঁচে আছি। বেঁচে থাকব। আবার মানুষের হিতার্থে কাজ করব। বাংলাদেশের মাটির প্রতি আমি সুবিচার করবই।’’
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ভাবিত নন তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও। আমেরিকা থেকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তিনি সুরক্ষিত রয়েছেন ভারতে। ভারত সরকার তাঁর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে। অডিওবার্তায় ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা গণহত্যার অভিযোগ এনেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের সংবিধান বলে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পদ থেকে সরানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইউনূস তো সেটাই করেছেন। শাস্তি তো ওর পাওয়ার কথা। উনিই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের উপর তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই অভিযোগ নাকচ করেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন সরাসরি কাউকে হত্যার নির্দেশ দেননি। অডিওবার্তায় শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছিল। তা প্রাণঘাতী নয়। মৃতদের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে, কী ভাবে তাঁদের মারা হয়েছে। কেন সাক্ষীদের বয়ান প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন হাসিনা। বলেছেন, ‘‘ইউনূস আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চাইছেন। কিন্তু তা এত সহজ নয়। আওয়ামী লীগ তৃণমূল স্তর থেকে উঠে এসেছে। কোনও ক্ষমতাদখলকারীর পকেট থেকে নয়।’’
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা নিয়েও সরব হয়েছেন হাসিনা। বলেছেন, ‘‘ওরা বলছে, আমি নাকি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছি। আমি তো ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। সেটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ? আর ভুক্তভোগীদের মুখের উপর ওরা যে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, সেটা কী ধরনের মানবিকতা?’’ সোমবারের রায়ের প্রসঙ্গে হাসিনার বক্তব্য, ‘‘ওরা রায় ঘোষণা করুক। আমি পরোয়া করি না। আল্লাহ আমাকে এই জীবন দিয়েছেন। আল্লাই নেবেন। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’’