সর্বশেষ

উত্তাল বাংলাদেশ, স্থবিরতার শঙ্কা তীব্র

১৬-১৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বাত্মক শাটডাউনের ডাক

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২:৪০
১৬-১৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বাত্মক শাটডাউনের ডাক

আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো ১৩ নভেম্বরের “সফল লকডাউন”–এর পর ১৬–১৭ নভেম্বর সারাদেশে সর্বাত্মক শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ, “প্রহসনমূলক বিচার” বন্ধ এবং গণতন্ত্র–পুনরুদ্ধারের দাবিতে ঘোষিত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে অস্থিরতা, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও জনজীবনের স্থবিরতার আশঙ্কা বেড়ে গেছে।

 

১৩ নভেম্বরের লকডাউন: শাটডাউনের পূর্বাভাস

 

আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বরের লকডাউনকে “ঐতিহাসিক ও স্বতঃস্ফূর্ত” উল্লেখ করে বলছে সেদিনের অভিজ্ঞতাই ১৬–১৭ নভেম্বরের পূর্ণাঙ্গ শাটডাউনের ভিত্তি। সেদিন ভোর থেকেই রাজধানীসহ বড় শহরগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন ছিল হাতে গোনা; গণপরিবহন চলাচল ছিল সীমিত; মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট, দীর্ঘ তল্লাশি, এবং ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। অফিসপাড়া, বাণিজ্যিক এলাকা, ব্যাংক, বাজার সব জায়গায় স্বাভাবিক ব্যস্ততা নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। স্কুল–কলেজ অনলাইন ক্লাসে চলে যায় বা ছুটি ঘোষণা করে।

 

এই পরিস্থিতিকে আওয়ামী লীগ “জনসমর্থনের স্পষ্ট প্রমাণ” হিসেবে দাবি করছে, যা ১৬–১৭ নভেম্বরের শাটডাউনে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে তাদের আশা।

 

১৬–১৭ নভেম্বরের শাটডাউন: অচলাবস্থার প্রস্তুতি

 

আওয়ামী লীগের ঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে যানপরিবহন কমে এসেছে। ১৬ তারিখ সকাল থেকেই বাস, ট্রাক, লঞ্চসহ বিভিন্ন পরিবহন চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসা–বাণিজ্য, ব্যাংকিং কার্যক্রম, অফিস–আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

 

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বড় শহরগুলোতে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্রবেশমুখে তল্লাশি বাড়বে; জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনও দীর্ঘ চেকিংয়ের মুখে পড়তে পারে। আন্তঃজেলা পরিবহনে সীমিত বাস চলাচল পরিস্থিতিকে আরও অচল করে তুলতে পারে।

 

মতিঝিল, গুলিস্তান, আগ্রাবাদ, জিন্দাবাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ক্রেতা ও কর্মী উপস্থিতি কমে যাওয়ার পূর্বাভাসও পাওয়া যাচ্ছে। রাতের পরিশোধন বাজার–চলাচলও কমতে পারে।

 

বিক্ষোভ, প্রতিরোধ, উত্তেজনা—রাজপথে রাজনৈতিক চাপ

 

আওয়ামী লীগ বলছে, তারা শান্তিপূর্ণ শাটডাউন ঘোষণা করলেও “সরকার পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা সৃষ্টি করছে।” অন্যদিকে সরকার দাবি করছে, সহিংসতার আশঙ্কা মোকাবিলায় ডিএমপি, বিডিআর ও অন্যান্য বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

১৩ নভেম্বরের মতো শাটডাউনের দিনেও রাস্তায় বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ বা দলীয় কার্যালয়ে হামলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

 

ছাত্রলীগের অবস্থান: ‘যত বেশি দমন, তত বেশি প্রতিরোধ’

 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, “অবৈধ, দখলদার ও ফ্যাসিস্ট” সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ছাত্রলীগ বলেছে,
 

১৬–১৭ নভেম্বরের সর্বাত্মক শাটডাউন সফল করতে আমরা সর্বোচ্চ সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ১৩ নভেম্বরের লকডাউন প্রমাণ করেছে—বাংলার ঘরে ঘরে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা।

 

সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, বর্তমান সরকার “গণবিরোধী অপশাসন” দিয়ে দেশকে সংকটে ঠেলে দিচ্ছে এবং ছাত্রসমাজ–শ্রমিক–শিক্ষক–সাধারণ মানুষের ওপর দমন–পীড়ন চালাচ্ছে। তারা ঘোষণা করেছে, যত বেশি দমন নেমে আসবে, তত বেশি প্রতিরোধ জোরদার হবে।

 

ইউনূস সরকারের অবস্থান

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার বলছে, আওয়ামী লীগের শাটডাউন দেশের ব্যপক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া “নিয়ম অনুযায়ী সময়মতো” এগোবে।

 

সরকার শেখ হাসিনার বিদেশ থেকে দেওয়া বিবৃতিকে “রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর প্রচেষ্টা” দাবি করে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।

 

পটভূমি: জুলাই দাঙ্গা থেকে বিচার ট্রাইব্যুনাল

 

২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের দাঙ্গার সময় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের’ নামে বিচার শুরু হয় যা এখনকার রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

 

দেশ কোন পথে প্রশ্নের উত্তর দেবে ১৬–১৭ নভেম্বর

 

১৩ নভেম্বরের সফল লকডাউন ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে স্থবিরতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৬–১৭ নভেম্বরের শাটডাউন আরও বিস্তৃত, দীর্ঘ ও গভীর অচলাবস্থার দিকে দেশকে ঠেলে দিতে পারে।

 

রাজপথ, রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনজীবন—সবক্ষেত্রে এখন উত্তেজনা, সতর্কতা ও অস্বস্তির এক অদৃশ্য রেখা তৈরি হয়েছে। ঐ দুই দিনই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনীতি কোন মোড়ে দাঁড়াবে এবং শাটডাউনের ফলাফল কীভাবে দেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পথচলায় প্রভাব ফেলবে।

সব খবর

আরও পড়ুন

দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের সর্বাত্মক শাটডাউনে অচল জনজীবন

ক্যাঙ্গারু কোর্টের রায়ে জনরোষ দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের সর্বাত্মক শাটডাউনে অচল জনজীবন

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণহীন ও হাস্যকর

আইনজ্ঞদের বিশ্লেষণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণহীন ও হাস্যকর

রায় প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী মঙ্গলবার সকাল–সন্ধ্যা শাটডাউনের ডাক

শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া রায় প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী মঙ্গলবার সকাল–সন্ধ্যা শাটডাউনের ডাক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়কে ‘প্রহসনমূলক’ অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান

১০০১ প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়কে ‘প্রহসনমূলক’ অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমায়েশি ফাঁসির রায় ঘোষণা

শেখ হাসিনার বিচারের নামে প্রহসন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমায়েশি ফাঁসির রায় ঘোষণা

“আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, আল্লাহই নেবেন, রায় নিয়ে পরোয়া করি না!”

রায়ের আগে শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাসী অডিওবার্তা “আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, আল্লাহই নেবেন, রায় নিয়ে পরোয়া করি না!”

আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে সহিংসতার আশঙ্কা

রায়ের আগেই জয়ের সতর্কবার্তা আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে সহিংসতার আশঙ্কা

চট্টগ্রামে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা আন্দোলনে; মাগুরায় সড়ক অবরোধ

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল চট্টগ্রামে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা আন্দোলনে; মাগুরায় সড়ক অবরোধ