সর্বশেষ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতারণার নতুন অস্ত্র ‘স্টারলিংক’, বাংলাদেশেও বাড়ছে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১৩
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতারণার নতুন অস্ত্র ‘স্টারলিংক’, বাংলাদেশেও বাড়ছে উদ্বেগ

ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতারণা চক্রের জন্য নতুন হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন ও পূর্ব তিমুরে এই সেবা ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে ‘স্ক্যাম সিটি’ যেখানে রোমান্স স্ক্যাম, বিনিয়োগ প্রতারণা, অনলাইন জুয়া, মানব পাচার, মাদক ও অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

 

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তর (UNODC) জানায়, ২০২৩ সালে এসব স্ক্যাম নেটওয়ার্ক ১৮ থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। মিডিয়া নজরদারি ও আইন প্রয়োগের চাপে চক্রগুলো এখন পূর্ব তিমুরসহ নতুন এলাকায় ঘাঁটি গাড়ছে।

 

মিয়ানমারে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হলেও, কেকে পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী ৩০টি রিসিভার জব্দ করেছে এবং ২ হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করেছে। এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্টারলিংক মিয়ানমারের শীর্ষ ইন্টারনেট উৎসে পরিণত হয়েছে।

 

প্রতারক চক্রগুলো স্টারলিংক বেছে নিচ্ছে তিনটি কারণে: এটি স্থানীয় নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে না, ট্র্যাকিং এড়াতে সহায়ক এবং দ্রুত স্থাপনযোগ্য। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে সহজেই অপারেশন চালানো যায়।

 

বাংলাদেশে এখনো স্টারলিংক ব্যবহার করে এমন প্রতারণার তথ্য না মিললেও, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন বাংলাদেশও একই স্যাটেলাইট কভারেজ অঞ্চলে থাকায় ভবিষ্যতে ঝুঁকি বাড়তে পারে। দেশে ইতোমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, রোমান্স স্ক্যাম, লোন অ্যাপ, গেমিং স্কিন ও অনলাইন জুয়ার মতো প্রতারণা বেড়েছে।

 

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, “স্টারলিংক বন্ধ করা সম্ভব নয়, বরং উৎস শনাক্ত ও প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সরকারের উচিত বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।”

 

‘সাইবার ৭১’-এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, “দেশে স্টারলিংকের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন হলে প্রতারণা শনাক্তকরণ সহজ হবে। এতে টার্মিনালের অবস্থান ও ডেটা ট্রাফিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।”

 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, “সাইবার অপরাধ সীমান্তহীন। পুলিশ সবসময় সতর্ক রয়েছে এবং অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে নাগরিকদেরও সচেতন থাকতে হবে।”

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি না নিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশও এই আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।

সব খবর