ডিজিটাল সেবা ও স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়লেও বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনো ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৫১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। এই চিত্রকে খাতসংশ্লিষ্টরা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার প্রকাশিত বিবিএসের ‘ব্যক্তি ও খানা পর্যায়ে আইসিটি ব্যবহারের জরিপ–২০২৪’-এর তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই–সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সারা দেশের ৬১ হাজার ৬৩২টি পরিবারের ওপর পরিচালিত এই জরিপে পাঁচ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের প্রতি দুই জনের মধ্যে একজনেরও বেশি মানুষ এখনো ডিজিটাল নেটওয়ার্কের বাইরে রয়ে গেছে। পারিবারিক পর্যায়েও চিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। জুলাই–সেপ্টেম্বর সময়ে মাত্র ৫৬ শতাংশ পরিবারে অন্তত একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল। সামগ্রিকভাবে বর্তমানে ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেটের আওতায় রয়েছে, যা ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষে ছিল ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান উদ্বেগজনক। তাঁর ভাষ্য, ভারতে প্রায় ৭০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে এই হার এখনো ৫০ শতাংশের নিচে।
বর্তমানে দেশের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮১ জন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তবে নিজস্ব মোবাইল ফোনের মালিকানা রয়েছে মাত্র ৫৭ শতাংশ মানুষের। একই সঙ্গে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখের বেশি।
বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। সে হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৯ কোটি ৫৯ লাখ মানুষের নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে।
বিবিএসের জরিপে নারী-পুরুষ এবং গ্রাম-শহরের বৈষম্যও স্পষ্ট হয়েছে। পুরুষদের মধ্যে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ। মুঠোফোনের মালিকানায়ও পুরুষেরা এগিয়ে—৬৩ শতাংশ পুরুষের নিজস্ব ফোন থাকলেও নারীদের মধ্যে এই হার ৫৩ শতাংশ।
শহরাঞ্চলে ৮১ শতাংশ পরিবারে স্মার্টফোন থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তা ৬৯ শতাংশ। তবে ইতিবাচক দিক হলো, দেশের ৯৯ শতাংশ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ ও অন্তত একটি মুঠোফোন রয়েছে। যদিও কম্পিউটার রয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারে।
ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রধান বাধা হিসেবে উচ্চমূল্য ও করের বোঝাকে দায়ী করছেন তিনি। তাঁর মতে, মোবাইল ডেটায় গ্রাহকের খরচের প্রায় অর্ধেকই সরকারের কাছে চলে যায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেভিনিউ শেয়ারিং ও তরঙ্গ ফি হিসেবে। এতে নিম্ন ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেটের মূল্য কমানো এবং কর কাঠামো সংস্কার না করা হলে দেশের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি আরও পিছিয়ে পড়বে।