১৩ই আগস্ট, ঢাকায় জাতীয় প্রেস ইনস্টিটিউটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা শ্রীমতী ফরিদা আকতার এক মহামূল্যবান বাণী প্রদান করিলেন। তিনি বলিলেন, “আমেরিকা আমাদের কৃষি খাত দখল করিতে চায়, পোল্ট্রি খাতও ছাড়িবে না।” শুনিয়া উপস্থিত জনতা কিঞ্চিৎ চমকিত হইলেও, উপদেষ্টার মুখে ফুটিল এক করুণ হাসি—“আমরা নিরুপায়, আমরা অসহায়।”
হায়! কী দুর্ভাগা জাতি আমরা! মাঠে ঘাটে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, কাঁদায় গড়াগড়ি খাইয়া কৃষকগণ ফসল ফলাইতেছেন। অথচ আমেরিকা নামক মহাশক্তিধর দেশটি আমাদের দুঃখ সহ্য করিতে পারিতেছে না। তারা চায়, আমরা আর কষ্ট না করি। তারা চায়, আমরা পায়ের উপর পা দুলাইয়া, গরুর মাংসের ঝোল খাইয়া জীবনটা আনন্দে কাটাই।
তারা মাত্র ৩০০ টাকায় গরুর মাংস দিবে—এমন মহৎ প্রস্তাব শুনিয়া অনেকেই গরুর প্রতি কিঞ্চিৎ অশ্রুপাত করিয়াছে। কারণ, এতদিন যাহারা গরুর মাংস খাইতে পারিত না, তাহারা এখন খাইবে। পোল্ট্রি খাত দখলের নামে আমিষের বিপ্লব ঘটাইবে আমেরিকা। হায়! কী মহাসুযোগ!
কিন্তু নিন্দুকেরা বসিয়া বসিয়া বলিতেছে, “এই তো আসল উদ্দেশ্য! দখল করিবার জন্যই এত আন্দোলন, প্রাণহানি!” তারা দেখিতেছে না, আমেরিকা যার বন্ধু, তাহার আর কিছু লাগিবে না। তারা বুঝিতেছে না, গরুর মাংসের মাধ্যমে জাতির মুক্তি আসিতেছে।
ইহা যে এক মাহেন্দ্রক্ষণ, তাহা বুঝিতে পারিলেন কেবল ইউনূস সরকার। তিনি বুঝিলেন, কৃষকের কষ্ট লাঘব করিতে হইলে কৃষি খাত আমেরিকার হাতে দিয়া দিতে হইবে। তিনি বুঝিলেন, পোল্ট্রি খাত দিয়া যদি জনগণের আমিষ চাহিদা পূরণ হয়, তবে তাহা হইবে এক মহা মানবিক সেবা।
জনগণ আজ কৃতজ্ঞ। তারা বলিতেছে, “আমরা ইউনূস সরকারকে আজীবন মনে রাখিব। তিনি আমাদের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ধান-চাল, ডিম-দুধ সব আমেরিকার হাতে দিয়া আমাদের মুক্তি নিশ্চিত করিয়াছেন।”
এখন কৃষকগণ মাঠে যাইবার পূর্বে ভাবিতেছেন, “যদি আমেরিকা সব সরবরাহ করে, তবে আমরা মাঠে যাই কেন?” তারা পায়ের উপর পা দুলাইয়া ভাবিতেছেন, “চাষাবাদ নয়, এখন সময় গরুর মাংসের ঝোল খাওয়ার।” এমন এক সময় আসিয়াছে, যাহা ইতিহাসে লেখা হইবে—“বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লব ঘটিল গরুর মাংসের মাধ্যমে, এবং তাহার নেপথ্যে ছিল এক মহাশক্তিধর বন্ধু।”
লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল; যে তাহার বিপন্ন সময়কে মোচনীয় কালি দ্বারা লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে