সর্বশেষ

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেন এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেন।

একুশ বছরেও বিচার অসম্পূর্ণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত ও ভয়াল এক দিন

জুলাই সনদের সূচনা ও কয়েকটি দফা নিয়ে আপত্তি বিএনপিরঃ সালাহউদ্দিন

বিশ্ববিদ্যালয়-আদালতে জামায়াতের লোক, আর আমরা ঘাট দখল করছিঃ বিএনপি নেতা আলতাফ

দেশে এক চেতনার বদলে আরেক চেতনার উদ্ভব হয়েছেঃ রিজভী

অগ্নিমূল্যের বাজারে দিশেহারা জনজীবন

বাংলাদেশ-পাকিস্তান কনফেডারেশনের ষড়যন্ত্র, স্বাধীনতার শেকড় উপড়ে ফেলার নীলনকশা

হারানো ভূখণ্ড ফেরানোর স্বপ্নে পাকিস্তান,বাংলাদেশ কি আবারও ষড়যন্ত্রের কবলে

“পাকিস্তানকে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে পূর্ব পাকিস্তানকে পুনরায় ফেডারেশনের অংশ হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে। ইতিহাস দ্বিধাকে ক্ষমা করবে না; এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।” — তাবাসসুম মোয়াজ্জম খান

বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় পাকিস্তানি সংবাদপত্রঃ ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ ফিরে পাওয়ার অলীক স্বপ্ন

আমেরিকা পরম বন্ধু হইয়াছে; এ আনন্দ কোথায় রাখি?

মতামত

উপদেষ্টার এপেনডিক্স ও রাষ্ট্রীয় রোগতত্ত্বের মহাকাব্য

প্রকাশিত: ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২১:১৩
উপদেষ্টার এপেনডিক্স ও রাষ্ট্রীয় রোগতত্ত্বের মহাকাব্য

মহান উপদেষ্টা ফারুকি মহাশয়ের চিন্তাধারা এতটাই শীতল যে, তাঁহার মস্তিষ্কে নিয়মিত উষ্ণ হাওয়া লাগানো আবশ্যক। এদিকে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা-প্রক্রিয়া যেন হিটস্ট্রোক না খায়, সেই আশঙ্কায় তাঁহাকে হেলিকপ্টারে চাপাইয়া কক্সবাজারে পাঠানো হইল—যেখানে হাওয়া মুক্ত, কিন্তু বিবেক বন্দী।

 

হাওয়া খাইতে গিয়াই উপদেষ্টা গুরুতর অসুস্থ হইলেন। রাষ্ট্র কাঁপিয়া উঠিল। হেলিকপ্টার পুনরায় উড়িল। ঢাকায় ফিরিয়া মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হইল, যাহারা রোগ না থাকিলেও রোগ আবিষ্কারে পারদর্শী। তাঁহারা ঘোষণা করিলেন—“উপদেষ্টার এপেনডিক্সই রাষ্ট্রীয় চিন্তার অন্তরায়। ওটিই যত নষ্টের গোড়া।” অতএব, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে এপেনডিক্স অপসারণ করা হইল। উপদেষ্টা সুস্থ, রাষ্ট্র আরও অসুস্থ।

 

এদিকে রাষ্ট্রের হাল এমন যে, অর্থনীতি লেজে গোবরে, রাজনীতি পাঁকে, বাজারে আগুন, জনগণের পেটে শূন্যতা। সরকার ভাবিল, উপদেষ্টার মতন রাষ্ট্রেরও মেডিক্যাল বোর্ড চাই। বোর্ড বসিল। বোর্ড বলিল, “রাষ্ট্রের রোগ ১৯৭১। স্বাধীনতার চেতনা অতিরিক্ত হইয়া গেছে। কাটিয়া ফেলিতে হইবে।”

 

চালের দাম বাড়ে—১৯৭১ এর দোষ। শ্রমবাজার বন্ধ—১৯৭১ এর দোষ। বিনিয়োগ নাই—১৯৭১ এর দোষ। বিদ্যুৎ নাই—১৯৭১ এর দোষ। আওয়ামি লীগ মাঠে নাই, কিন্তু দোষ তাহাদেরই। অতএব, ১৯৭১ কে রাষ্ট্রীয় এপেনডিক্স ঘোষণা করিয়া অপসারণ করিবার প্রস্তাব উঠিল।

 

রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণী এখন এমন এক উচ্চতায় অবস্থান করিতেছে, যাহা সাধারণ জনগণের দৃষ্টিসীমার বাইরে। তাঁহারা গণতন্ত্রের কথা বলেন বটে, কিন্তু গণতন্ত্র যেন তাঁদের ব্যক্তিগত রিসোর্ট—যেখানে জনগণ প্রবেশ নিষিদ্ধ। হেলিকপ্টার, হেলিপ্যাড, হেলিপলিটিক্স—সবই তাঁহাদের। জনগণের জন্য আছে রিকশা, রেশন, আর রম্য রচনা।

 

অর্থনীতিঃ বাজেট এখন এমন এক কবিতা, যাহা পড়িলে অর্থনীতিবিদগণ কাঁদেন, কবিগণ হাসেন।

শিক্ষাঃ পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস নাই, আছে হুজুরের তাফসির। গণিতের অঙ্কে ‘জিন’ ঢুকিয়া পড়িয়াছে।

স্বাস্থ্যঃ হাসপাতাল আছে, ডাক্তার নাই। ডাক্তার আছে, ওষুধ নাই। ওষুধ আছে, রোগী নাই—কারণ তাঁহারা লাইনে খাড়াইয়াই মরিয়া গিয়াছেন।

বিদ্যুৎঃ বিদ্যুৎ আসে, বিদ্যুৎ যায়। সরকার বলে, “আসা-যাওয়া তো জীবনেরই অংশ।”

 

রাষ্ট্র এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে, যেখানে অসাম্প্রদায়িকতা একটি ভাইরাস। সরকার বলিতেছে, “এই ভাইরাস নির্মূল করিতে হইবে।” অতএব, মন্দিরে হামলা, গির্জায় আগুন, বৌদ্ধ বিহারে হুমকি—সবই ভাইরাস নির্মূলের অংশ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এখন রাষ্ট্রীয় ‘কনসেপ্ট’, বাস্তবতা নহে।

 

যে কেহ বলিবে “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”—তাঁহাকে রাষ্ট্র বলিবে, “আপনি ভাইরাস আক্রান্ত।” তাঁহাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হইবে, যেখানে তাঁহার সঙ্গে থাকিবে কিছু ‘উন্নয়নশীল’ গুজব, কিছু ‘দেশদ্রোহী’ কবিতা, এবং একটি ‘নির্বাচনবিহীন’ গণতন্ত্র।

 

উপদেষ্টার এপেনডিক্স কাটা গিয়াছে, কিন্তু রাষ্ট্রের মস্তিষ্কে এখন পুঁজ জমিয়াছে। মেডিক্যাল বোর্ড বলিতেছে, “চিন্তা করিবেন না, আমরা নতুন চিন্তা প্রতিস্থাপন করিব।” সেই চিন্তা হইবে—“দেশ ভালো আছে, জনগণ খারাপ।” রাষ্ট্র ভালো থাকিবে, যদি জনগণ চুপ থাকেন।

 

লেখকঃ এক ক্লান্ত পেনসিল; যে তাহার ক্ষয়িষ্ণু সময়কে অসহিষ্ণুতার কালিতে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে

সব খবর