জাপানি আমেরিকানদের কাছে: ১৯৮৮ সালে, রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান নাগরিক স্বাধীনতা আইনে স্বাক্ষর করেন, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি আমেরিকানদের অন্তরীণতার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া হয় এবং প্রত্যেক জীবিত অন্তরীণকে ২০,০০০ ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান করে হয়েছিল।
জাপানি কানাডিয়ানদের কাছে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদের অন্তরীণতা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য ১৯৮৮ সালে একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা এবং ক্ষতিপূরণ অধ্যাদেশ জারি করেছিল।
আদিবাসীদের কাছে: কানাডা আবাসিক স্কুল ব্যবস্থার মাধ্যমে আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক অন্তর্ধান করানোর দায় স্বীকার করে বারবার ক্ষমা চেয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারের ক্ষমা সবচেয়ে আলোচিত, যদিও সমালোচকরা একে পর্যাপ্ত পদক্ষেপসমর্থিত মনে করেননি।
পরিবার থেকে চ্যুত প্রজন্মের কাছে: ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড “Stolen Generations” নামে পরিচিত আদিবাসী শিশুদের পরিবার থেকে জোর করে আলাদা করার সরকারি নীতির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
১৯১০ – ১৯৪৫ সালের মধ্যে উপনিবেশ বানানো এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন অপরাধ ও নারীদের উপর চালানো নির্যাতনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে জাপান কয়েক দফা ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং আর্থিক দণ্ড ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েছে। কয়েক দফা ক্ষমা প্রার্থনার কারণ ছিল যথাযথ আন্তরিকতার ঘাটতি এবং ভাষাগত দুর্বলতা।
নামিবিয়া (তৎকালীন জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা): নামিবিয়ার হেরেরো ও নামা জনগণের বিরুদ্ধে ১৯০৪–১৯০৮ সালের গণহত্যাকে ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। পুনর্মিলন চুক্তির আওতায় ৩০ বছরে ১.১ বিলিয়ন ইউরো উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে এটিকে সরাসরি ক্ষমা বা আনুষ্ঠানিক ক্ষতিপূরণ নয় বলে সমালোচনা করা হয়েছে।
লিবিয়ার কাছে: ২০০৮ সালে লিবিয়ার কাছে ঔপনিবেশিক দখলের জন্য ক্ষমা চেয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করে, যা বন্ধুত্ব চুক্তির অংশ হিসেবে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
কেনিয়ার কাছে: ১৯৫০-এর দশকে মাউ মাউ বিদ্রোহের সময় নির্যাতনের জন্য ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী "আন্তরিক অনুশোচনা" প্রকাশ করেছিলেন এবং নির্যাতিত হাজার হাজার কেনিয়ানকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা করেছিলেন। যদিও এটি সম্পূর্ণ সংসদীয় ক্ষমা চাওয়া ছিল না, তবু এটি ছিল একটি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং নিষ্পত্তি।
চাগোসিয়ানদের কাছে: ১৯৬০ এবং '৭০ এর দশকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের (ডিয়েগো গার্সিয়া) বাসিন্দাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য ও মার্কিন ঘাঁটি নির্মাণের জন্য ব্রিটেন বারবার দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষতিপূরণ দিলেও ফেরার অধিকার নিয়ে এখনো বিতর্ক চলমান।
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কাছে: ২০২০ সালে বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ তার পূর্বপুরুষ রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ডের রাজত্বকালে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য "গভীর অনুশোচনা" প্রকাশ করেছিলেন, যার নৃশংস শাসন লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। ২০২২ সালে, বেলজিয়ামের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আফ্রিকান উপনিবেশগুলিতে হাজার হাজার মিশ্র-বর্ণের শিশুদের অপহরণ এবং পৃথকীকরণে ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়েছিল।
কমফোর্ট উইমেন: জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইম্পেরিয়াল জাপানি সেনাবাহিনীর জন্য যৌন দাসত্বে বাধ্য হওয়া মহিলাদের (প্রাথমিকভাবে কোরিয়া, চীন এবং ফিলিপাইন থেকে) বিভিন্ন বিবৃতি দিয়েছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মনে করে এসব ক্ষমা অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বব্যাপী চলমান বিতর্ক, যেখানে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি ক্যারিবিয়ান এবং আফ্রিকান দেশগুলির দাস ব্যবসার ভুক্তভোগীদের বংশধর সম্প্রদায়গুলির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা এবং ক্ষতিপূরণের দাবির মুখোমুখি হচ্ছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট দাসত্বে নেদারল্যান্ডসের ভূমিকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং এটিকে "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" বলে অভিহিত করেছিলেন। এটি ছিল একটি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমা প্রার্থনা এবং এর সঙ্গে সচেতনতা প্রকল্পে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ট্রান্সআটলান্টিক দাস ব্যবসার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য কখনও তার কেন্দ্রীয় ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তবে, ইংল্যান্ডের চার্চ এবং লিভারপুল শহর প্রশাসনের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষমা চেয়েছে।
দাসত্বের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার কখনও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তবে, ২০০৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ এবং ২০০৯ সালে সিনেট দাসত্ব এবং পরবর্তীতে জিম ক্রো আইনের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। বেশ কয়েকটি পৃথক রাজ্য এবং প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব উদ্যোগে ক্ষমা প্রার্থনার ঘোষণা জারি করেছে।
ইতিহাসের দায় কখনো মুছে ফেলা যায় না, তবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমা চাওয়া ভুক্তভোগী ও উত্তরসূরিদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক। বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রসঙ্গে নতুন করে আলোচনায় আসা ক্ষমার প্রশ্ন আসলে গোটা বিশ্বের দায়বদ্ধতার আলোচনার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। রাষ্ট্রীয় ক্ষমা প্রার্থনা কেবল অতীতের দায় স্বীকার নয়—এটি ভবিষ্যতের ন্যায্যতা, মানবাধিকার ও পারস্পরিক সম্মানের পথকেও সুগম করতে পারে।