ডিম - খাবার হিসেবেই যথেষ্ট জনপ্রিয়, কিন্তু রাজনীতি ও প্রতিবাদের মশলাদার অস্ত্র হিসেবেও এর আবেদন কম নয়। পশ্চিমা দুনিয়ায় ডিম ছোঁড়া একপ্রকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মধ্যযুগের ইউরোপেই মানুষ অপ্রিয় রাজনীতিবিদ বা নাট্যশিল্পীর দিকে ডিম ছুঁড়ে বিরক্তি প্রকাশ করত। ব্রিটেন ও আমেরিকায় রাজনৈতিক সভা কিংবা প্রতিবাদ মিছিল মানেই কখনো না কখনো কাউকে কাঁচা ডিমে ভিজতে হয়েছে। ডিমের ভেতরের সাদা অংশ যেমন হালকা আঠালো, তেমনি এর সামাজিক বার্তাও বেশ শক্ত। মানে,“আপনি আমাদের পছন্দের নন!”
পশ্চিমে এই ধারা ক্রমেই একধরনের প্রতীকী প্রতিবাদে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদের বক্তৃতা চলাকালে কেউ যদি গোপনে ডিম ছুঁড়ে মারে, সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম নিশ্চিত। বলা যায়, পশ্চিমে ডিম অনেকটা সস্তা কিন্তু কার্যকর সংবাদ সম্মেলন।
বাংলাদেশে অবশ্য ডিমের যাত্রা শুরুটা খাওয়ার প্লেটে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও বেশ ঝলমল করছে। একদা ডিম ছিল সাধারণ বাজারের পণ্য, এখন তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক প্রতিবাদ কিংবা হেনস্তার প্রতীক। অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকারের সময় বিভিন্ন দলীয় নেতার দিকে ডিম উড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে এখন পশ্চিমা প্রবাসে এনসিপি নেতাদের উদ্দেশে ডিম ছোড়া সবই একধরনের বৈশ্বিক ‘ডিম সংযোগ’।
বাংলাদেশি সংস্করণে অবশ্য বিষয়টি আরও নাটকীয়। এখানে ডিম ছোড়া শুধু প্রতিবাদ নয়, সাথে থাকে ভক্তদের উল্লাস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ডিম হিট’ ভিডিওর ভাইরাল হওয়া, আর বাজারে হঠাৎ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া। কাঁচা ডিমে আক্রান্ত হতে দেখে জনগন রসিকতা করে বলছে ‘গণতন্ত্রের ওমলেট’।
ডিমের এই বৈশ্বিক রূপান্তর আসলে মানবসভ্যতার সৃজনশীলতা। লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক কিংবা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যেখানেই হোক, ডিম ছোড়া মানে হলো- লোকজনের ক্ষোভ ফুটছে, তবে বুলেট নয় বরং প্রোটিন দিয়ে। এ যেন এক অদ্ভুত ব্যঙ্গাত্মক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যেখানে ক্ষুধাও মেটে না, আবার হাসিও থামে না।
সার কথা, পশ্চিমে ডিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল শত শত বছর আগে, বাংলাদেশ এখন তার নতুন পরীক্ষাগার। আর ডিম খাওয়াতে বা ছুঁড়তে সব জায়গায় সমান জনপ্রিয়। কে জানে, একদিন হয়তো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও কোনো প্রতিনিধি হঠাৎ মাথা মুছে বলতে পারেন- “এই ডিমতত্ত্বই আসলে গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ।”