আমি আসিয়াছি, ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়া। আমি ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়াছি, কিন্তু শুধু ভোট চাই না—চাই তোমার বিবেক, যুক্তি, স্বাধীনতা, মানবতা—সবকিছু আমার ইসলামী রাজনীতির পায়ের নিচে রাখিয়া দাও।
আমি নারীদের উচ্চশিক্ষা নিরুৎসাহিত করি, কারণ তাহা ফিতনার উৎস। তবে যদি তাহারা আমার ছায়াতলে আসে, তবে হিজাব না থাকিলেও আমি কথা কইবোনা। আমি ওড়না না থাকিলে প্রশ্ন করি, কিন্তু যদি তাহারা আমার দলের হয়, তবে তাহা দায়মুক্তি পাইবে। আভায়ায় আবৃত নারীর শরীরে বাতাশ লাগিলে আমার ইমান দন্ড মজবুত হইয়া যায়। তাই বাতাশে নারীদের চলাচল সীমিত করিবো।
আমার দৃষ্টিশক্তি দলীয় আনুগত্যে নিয়ন্ত্রিত—ইহাই আমার ইসলামী অপটিক্স।
আমি ছাত্রলীগের সাথে অঙ্গাঙ্গি রাজনীতি করি, কিন্তু সেইটাকে আমি “কৌশলগত জিহাদ” বলিয়া বিবেচনা করি। আমি সত্যকে মিথ্যা বলি, কারণ ইসলামের স্বার্থে মিথ্যাও আমার কাছে জায়েজ। আমি সুপ্ত থাকি, গুপ্ত থাকি, সুযোগ পাইলে ক্যাম্পাস দখল করি। আমি ধর্মের নামে ক্ষমতা চাই আর ক্ষমতার নামে ধর্ম বিক্রি করি।
আমি নারীদের পুরুষের সম্পদ মনে করি। আমি তাহাদের সোহবত করি, আড়ালে, অন্ধকারে, কারণ তা আমার আত্মশুদ্ধির পথ। তবে তারা যদি গ্রুপ স্টাডি করে, ক্লাসে পাশাপাশি বসে, বাদাম খায়—তবে নিশ্চই তারা জাহান্নামের পথে পা বাড়াইয়া আছে। আমি বাদামকে ফিতনার ফল স্বরূপ ঘোষণা করিয়াছি, যেন ক্যাম্পাসে বাদাম খাওয়া মানেই ধর্মচ্যুতি।
আমি হাকিম চত্তরকে “গাজওয়াতুল হিন্দ” চত্তর ঘোষণা করিব, মধুর ক্যান্টিন হইবে “মোসাহেব” ক্যান্টিন, অপরাজেয় বাংলা হইবে “নাকাবাল তাসখায়ের পাকিস্তান”। রাজু ভাষ্কর্য? তা তো মূর্তি! আমি ক্যাম্পাসকে মূর্তি মুক্ত করব, যেন মুক্তচিন্তার প্রতীকগুলো আমার ঈমানের জন্য হুমকি না হয়।
আমি প্রতিশ্রুতি দিতেছি—আমার সাথে থাকিলে বিনা হিসাবে বেহেশতে যাইবে। ভোট না দিলে?—তোমার শরীরের এনাটমি ক্লাসে পাঠ দেব, যেন বুঝিতে পারো কোন অঙ্গটি কতখানি পাপগ্রস্ত। আমি জান্নাতের টিকিট বিক্রি করি আর জাহান্নামের হুমকি দিয়ে ভোট চাই।
আমার ইশতেহারে নেই কোনো শিক্ষা, নেই কোনো গবেষণা, নেই কোনো ছাত্রস্বার্থ। আছে কেবল দখল, হুমকি, বিভ্রান্তি এবং একধরনের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ—যেখানে ক্যাম্পাস মানে আমার খাসমহল আর শিক্ষার্থী মানে আমার বেহেশতের ভোটার।
আমি সংস্কৃতির নামে চাপাইয়া দিতে চাই দলীয় শুদ্ধতা, যেখানে বাদাম খাওয়া, ক্লাসে বসা, সংগঠন করা—সব নিষিদ্ধ। আমি ক্যাম্পাসকে বানাইতে চাই একধরনের দলীয় মক্তব, যেখানে প্রশ্ন করা মানেই কুফরি।
আমি বলি, ভোট দাও, না দিলে—তোমার বিবেকের পোস্টমর্টেম করিব। আমি জাতির ভবিষ্যৎ, আমি ক্যাম্পাসের খলিফা, আমি সত্যের বাহক, যদিও মাঝে মাঝে মিথ্যার বাহনে চড়িয়া ওয়েস্টিনে যাই, হংস ভক্ষণ করি।
লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল - যে তাহার নির্বাসিত সময়কে অনুতাপের কালিতে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে