সর্বশেষ

রাজনৈতিক ব্যঙ্গ

“শেখ হাসিনা কি ভারতের আজ্ঞাবহ না ভারতবিরোধী?”

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩০
“শেখ হাসিনা কি ভারতের আজ্ঞাবহ না ভারতবিরোধী?”

বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে আজ এক অদ্ভুত নাটক চলিতেছে। একদল সমালোচক বলিতেছে শেখ হাসিনা ভারতের আজ্ঞাবহ; অপরদল বলিতেছে তিনি ছিলেন ভারতের চোখে চোখ রাখিয়া দাঁড়াইবার একমাত্র সাহসী নেতা। সত্য কথা হইল, উভয় পক্ষই আংশিক সত্য বলিতেছে, আবার উভয় পক্ষই আংশিক মিথ্যা বলিতেছে। কারণ হাসিনার কূটনীতি ছিল এমন এক জাদুকরী নাটক, যেখানে ভারত হাসে, চীন হাসে আর বাংলাদেশের অর্থনীতি নিরবে বিকশিত হয়।

 

স্বাধীনতার পর হইতে ছিটমহল সমস্যাটি ছিল এক অনন্ত কাহিনী। ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা ভারতের সহিত Land Boundary Agreement সম্পাদন করিয়া ১৬২টি ছিটমহল আদায় করিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী ইতিহাসে আর কোনো নেতা এই সাহস দেখাইতে পারেন নাই। সমালোচকেরা বলিলেন, “এটা ভারতের দয়া।” হাসিনা বলিলেন, “এটা বাংলাদেশের পাওনা।” ব্যঙ্গ করিয়ে বলিতে হয়, আজ্ঞাবহ হইয়া নয় বরং আজ্ঞা আদায় করিয়া তিনি ভারতের কাছ হইতে জমি ফিরাইয়া আনিলেন। নিজের ভূখন্ড হারাইয়া ভারতবাসী শেখ হাসিনাকে অভিশাপ দিলো কী না তাহা জানা গেলোনা।

 

একইভাবে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশ ১৯,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা পাইলো। ভারত নীরবে মাথা নত করিল আর হাসিনা হাসিলেন,“আজ্ঞাবহ” হইয়া নয়, বরং “আজ্ঞা আদায়কারী” হইয়া।

 

বিদ্যুতের খেলাটি আরও মজার। ভারত হইতে বিদ্যুৎ কিনিয়া আবার ভারতের কাছেই বিক্রি করা এ যেন এক ব্যঙ্গাত্মক বাণিজ্য। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ভারতের কাছ হইতে প্রায় ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করিয়াছে। ভারত বিরোধীরা বলিলেন,“ইহা দাসত্ব।” হাসিনা বলিলেন,“ইহাকে ব্যবসা বলে।” অর্থনীতির ভাষায় যাহা ‘ক্রস-বর্ডার ট্রেড’, ব্যঙ্গের ভাষায় তাহা ‘ক্রস-বর্ডার ঠাট্টা’।

 

নদীর পানিচুক্তি নিয়াও হাসিনার কূটনীতি ব্যঙ্গাত্মক। তিস্তা চুক্তি হইল না, কিন্তু গঙ্গার পানিচুক্তি হইল। বিরোধীরা বলিলেন,“তিস্তা নাই।” হাসিনা বলিলেন,“গঙ্গা আছে।” এ যেন এক ব্যঙ্গাত্মক সমীকরণ যেখানে মুলা ঝুলাইয়া টিলা আদায়।  

 

ঘটনা এইখানে শেষ হইলেই হইতো। কিন্তু ঘনঘটা আরো গভীরে। স্বয়ং ভারতমাতার জমিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির ফ্যাক্টরি বসাইয়া শেখের বেটি সেভেন সিস্টারের রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক বাজার দখল করিতে যাহা মনস্থ করিয়াছিলেন, আজ কালকার শিশু রাজনৈতিকদের তাহা ভাবিলেও বিছানা ভিজাইয়া ফেলিবার দশা হইবে।

 

বাংলাদেশের কূটনীতির সবচেয়ে বড় ব্যঙ্গ হইল ভারত-চীন সার্কাস। ভারতকে ব্যবহার করিয়া বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, পানিচুক্তি আদায়; চীনকে ব্যবহার করিয়া বন্দর, সেতু, প্রকল্প আদায়। ভারত বিরোধীরা বলিলেন,“চীন আসিতেছে।” হাসিনা বলিলেন,“ভারতও থাকিতেছে।” এ যেন এক ভারসাম্যের খেলা যেখানে দুই শত্রু দেশ একই মঞ্চে নাচিয়াছে আর হাসিনা বাঁশি বাজাইয়াছেন।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত এক দশকে গড় প্রবৃদ্ধি ৬–৭ শতাংশ হইয়াছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করিয়াছিল। ভারত হইতে বিদ্যুৎ আমদানি, চীন হইতে অবকাঠামো ঋণ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তা—সব মিলিয়া হাসিনার অর্থনৈতিক কূটনীতি এক ব্যঙ্গাত্মক সিম্ফনি। সমালোচকেরা বলিলেন, “ঋণের ফাঁদ।” হাসিনা বলিতেন, “উন্নয়নের সিঁড়ি।”

 

যাহারা আজ ভারত বিরোধিতা করেন, তাহারা আসলে ভারতের কাছে বিক্রি হইবার জন্য বসিয়া আছেন। সকালে দিল্লী না ঢাকা শ্লোগান তুলিয়া দুপুরের পর সাসুরাল গেন্দা ফুল না ছাড়িলে তাহাদের দিবানিদ্রার ব্যাঘাত ঘটে। বিকালে ভারতের সেভেন সিস্টার দখলে নিবার প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়া রাতে ভারতীয় পেঁয়াজ, মরিচে আলু মাখিয়া ভারতের রুই কাতলার পেটির বৃহৎ পিস না সাজাইলে গোস্যা করে।

 

আর যাঁকে ভারতের আজ্ঞাবহ বলা হয়, তিনি ভারতের কাছ হইতে ছিটমহল, সমুদ্রসীমা, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো—সবই আদায় করিয়াছেন। তাই বলা যায়, শেখ হাসিনা ভারতের আজ্ঞাবহ নন, বরং ভারতের আজ্ঞা আদায়কারী।

 

লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল; রঙ্গে ভরা বঙ্গের এক ভগ্ন দর্শক

সব খবর