সর্বশেষ

ব্যঙ্গ কলাম

শিশুদলের অভিমানে নির্বাচন কমিশনের মাথায় হাত

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৬
শিশুদলের অভিমানে নির্বাচন কমিশনের মাথায় হাত

নির্বাচনের মৌসুমে যখন জাতি ব্যস্ত প্রার্থীর নাম, প্রতীকের রঙ, পোস্টারের ছাপ ও মাইকসজ্জায়, তখন জাতীয় রাজনীতির নবীনতম শক্তি “শিশু পার্টি”—অর্থাৎ এনসিপি—নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ঘুম হারাম। অর্ধশতাধিক প্রতীক নির্বাচন কমিশন তাদের সামনে সাজিয়ে ধরিয়াছে—বেগুন, কলা, চিংড়ি, কাপ-পিরিচ, আলমারি, উটপাখি, কম্পিউটার, খাট, ঘুড়ি, চার্জার লাইট, টিউবওয়েল, জগ, জাহাজ, টিফিন ক্যারিয়ার—কিন্তু শিশুদলের মন কিছুতেই গলিতেছে না।

 

শিশুদলের নেতৃবৃন্দ বলিতেছেন, “আমরা শাপলা লতা ছাড়া কিছুই চাই না। বর্ষার সিজনে শাপলা লতার তরকারি খাইয়া আমাদের হৃদয়ে যে ভক্তি জন্ম নিয়েছে, তাহা তুলনাহীন। শাপলা আমাদের আত্মা, আমাদের আদর্শ, আমাদের প্রতীক।”

 

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা দুঃখ করিয়া বলিলেন, “বেগুন তো উপাদেয়, কলা কতইনা পুষ্টিকর আর চিংড়ির মালাইকারির কথাটা একটু খানি ভাবিয়া দেখো! যে খাবারই পছন্দ, তাহা বাড়ি নিতে টিফিন ক্যারিয়ার চাই আর বাড়ি নিয়া রাখিতে আলমারি। পানির জন্য জগ, ঘুমের জন্য খাট। এত কিছু দিয়াও যদি মন না গলে, তবে আমাদের কী করিবার আছে?”

 

শিশুদলের এক মুখপাত্র বলিলেন, “বেগুনে গ্যাস হয়, কলায় পিচ্ছিল, চিংড়িতে অ্যালার্জি। কাপ-পিরিচে চা খাইলে হাত কাঁপে, আলমারিতে ভূত থাকে, উটপাখি উড়ে যায়, কম্পিউটার হ্যাং করে, খাটে পা পড়ে, ঘুড়ি ছিঁড়িয়া যায়, চার্জার লাইটে ব্যাটারি ডাউন হয়, টিউবওয়েল চাপিতে শক্তি লাগে, জগে পানি ভরা ভারি ঝঞ্জাট, জাহাজে টিকিট লাগে, টিফিন ক্যারিয়ারে ঢাকনা নেই। আমরা শাপলা চাই, শুধু শাপলা।”

 

এমন যুক্তি শুনিয়া কমিশনের সদস্যগণ একে একে মাথা চুলকাইতে লাগিলেন। কেউ বলিলেন, “শাপলা তো জাতীয় ফুল, তাহা প্রতীক হইলে জাতীয় ফুলের মর্যাদা কোথায়?” অন্যজন বলিলেন, “শাপলা লতা তো লতা, তাহা ভোটের প্রতীকে বাঁধিবে কেমন করিয়া?”

 

জাতি আজ চিন্তিত। এনসিপিকে রাজি করাইতে কী লাগিবে? শাপলার তরকারি খাইয়া যদি ভোটের প্রতীক নির্ধারণ হয়, তবে আগামীতে কচুরিপানা, কচুর শাক-পাতাও দাবিতে আসিবে কি না, তাহা ভাবিয়া বিশিষ্টজনেরা উদ্বিগ্ন।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলিতেছেন, “শিশুদল যদি শাপলা না পায়, তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিবে না। আর যদি পায়, তবে তাহারা প্রতীক নয়, ফুলের রাজনীতি করিবে।”

এদিকে কমিশনের কর্তা বলিতেছেন, “আমরা প্রস্তুত, যদি প্রয়োজন হয়, শাপলা লতার জন্য বিশেষ আইন করিব। তবে শর্ত একটাই—শিশুদল ভোটে অংশ নিক, শাপলা থাক বা না থাক।”

 

জাতীয় রাজনীতির এই শাপলা-সঙ্কটে এখন গোটা দেশ অপেক্ষায়—শিশুদল কি শাপলা ছাড়িবে, না শাপলা নিয়াই রাজনীতির মাঠে নামিবে? নির্বাচন অপেক্ষা বড় প্রশ্ন এখন—শাপলার গতি কী হইবে?

 

লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল, যে তাহার ব্যাঙ্গাত্মক সময়টাকে রম্যের কালিতে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে

সব খবর