সর্বশেষ

ব্যঙ্গ কলাম

শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্র - উভয়ের মৃত্যুদণ্ডের রায়ঃ এক প্রহসনের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩
শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্র - উভয়ের মৃত্যুদণ্ডের রায়ঃ এক প্রহসনের মঞ্চায়ন

সকল সাক্ষ্য-সাবুদ সাপেক্ষে প্রমাণ হইতেছে যে, আসামী শেখ হাসিনা অপরাধের এমন এক মহাকাব্য রচনা করিয়াছেন, যাহার তুলনা ইতিহাসে দুর্লভ। আদালতের গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষিত হইল—তিনি এতই অপরাধী যে, তাঁহার অপরাধের ভারে পৃথিবীর ন্যায়বিচার কেঁপে উঠিল।

 

প্রথম অপরাধ—তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গৃহহীনকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়াছেন। হায়! সমাজের অভিজাত শ্রেণীর জাত্যভিমান ভেঙে গৃহহীনকে ঘর দেওয়ার দুঃসাহস কি সহ্য করা যায়? আদালত বলিল, “এ অপরাধে তাঁহার ফাঁসি হওয়া উচিত।”  

 

দ্বিতীয় অপরাধ—বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদান। সমাজে যাহারা অবহেলিত, তাহাদের মর্যাদা দিয়া বাঁচাইবার অপরাধে তিনি দোষী। আদালতের ভাষায়, “এমন দয়া সমাজের জন্য বিপজ্জনক।”  

 

তৃতীয় অপরাধ—আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করিয়া বাংলাদেশের জন্য বিশাল সামুদ্রিক এলাকা অর্জন। আদালত বলিল, “সার্বভৌমত্ব বৃদ্ধি করা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।”  

চতুর্থ অপরাধ—শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে বই প্রদান। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করিয়া অজ্ঞতার বাজার ধ্বংস করিবার অপরাধে তিনি দোষী সাব্যস্ত।  

 

নারীদের চাল, কোটা ও শিক্ষার সুযোগ দিয়া মোল্লাদের হেরেমখানা শূন্য করিবার অপরাধে তিনি দোষী। পদ্মাসেতু নির্মাণ করিয়া কোটি মানুষের জীবনমান উন্নত করিবার অপরাধে তিনি দোষী। মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করিয়া ঢাকাবাসীর যাতায়াত সহজ করিবার অপরাধে তিনি দোষী।  

 

গ্রামীণ সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করিয়া গ্রামকে শহরের সুবিধা দিবার অপরাধে তিনি দোষী। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করিয়া অন্ধকার দূর করিবার অপরাধে তিনি দোষী। হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করিয়া কোটি মানুষের জীবন বাঁচাইবার অপরাধে তিনি দোষী।  

 

কওমী শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় আনিবার অপরাধে তিনি দোষী। মডেল মসজিদ নির্মাণ করিয়া ধর্ম ব্যবসা বন্ধ করিবার অপরাধে তিনি দোষী।  

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বাজেট বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি, জিডিপি বৃদ্ধি—সবই গুরুতর অপরাধ। আদালত বলিল, “অর্থনীতি উন্নত করা মানে অপরাধের শীর্ষে আরোহণ।”  

 

করোনা মহামারীতে কোটি মানুষের জীবন বাঁচাইবার অপরাধে তিনি দোষী। সেন্ট মার্টিনে সামরিক ঘাঁটি না বানাইবার অপরাধে তিনি দোষী। সন্ত্রাসী ও জঙ্গী দমন করিয়া বিএনপি-জামাতের ক্ষতি করিবার অপরাধে তিনি দোষী। দারিদ্র্য কমাইবার অপরাধে তিনি দোষী।  

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হইবার অপরাধে তিনি দোষী। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত রাজাকারদের বিচার করিবার অপরাধে তিনি দোষী। সর্বোপরি, দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করিবার অপরাধে তিনি দোষী।  

 

সকল অপরাধের ভারে আদালত ঘোষণা করিল—“আসামী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হইবে। পাশাপাশি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশেরও মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হইল।”

 

হায়! কী ভয়ঙ্কর অপরাধ—গৃহহীনকে ঘর দেওয়া, শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া, নারীদের ক্ষমতায়ন করা, অর্থনীতি উন্নত করা, জনগণকে বাঁচানো! আদালতের রায় হাস্যকর ব্যঙ্গের প্রতীক হইয়া উঠিল। ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন, উন্নয়নের নামে অপরাধ, আর জনগণের কল্যাণের নামে মৃত্যুদণ্ড—ইহাই আজকের রায়ের সারমর্ম।  

 

লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল, অবক্ষয়ের ধ্বসে নিমজ্জমান যে প্রেতাত্মা

সব খবর