সর্বশেষ

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন

প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদেরকে পুলিশের লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২১
প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদেরকে পুলিশের লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

সরকার ঘোষিত বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিকে ‘অপর্যাপ্ত ও অবাস্তব’ উল্লেখ করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছেন। রবিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা ও উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে তারা ‘লাগাতার অবস্থান’ কর্মসূচি শুরু করেন।

 

পুলিশের লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড

 

দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষকদের রাস্তা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, “আপনারা শহীদ মিনারে চলে যান, পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হলো। এরপর আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

 

তবে শিক্ষকরা রাস্তা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রেস ক্লাবের সামনে টানা কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয় এবং কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীকে লাঠিপেটা করা হয়। এতে অন্তত কয়েকজন আহত হয়েছেন।

 

 

পরে পুলিশ তোপখানা, সেগুনবাগিচা ও সার্ক ফোয়ারা এলাকায় অবস্থান নেয়। ঘটনাস্থল থেকে বিশেষ প্রতিনিধির বরাতে জানা যায়, দুপুর ২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক পুনরায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

 

আন্দোলন শহীদ মিনারে স্থানান্তর

 

পুলিশি অভিযানের পর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শহীদ মিনারে চলে যায়। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “প্রশাসনের অনুরোধে আমরা প্রেস ক্লাব এলাকা ছেড়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিচ্ছি। এখান থেকে আমরা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”

 

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করবেন। “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না,” বলেন দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।

 

নওগাঁ থেকে আসা শিক্ষক অহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা আমাদের বৈধ দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলাম। আমাদের দাবি না শুনে পুলিশ বলপ্রয়োগ করেছে।”

 

দাবি ও প্রেক্ষাপট

 

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি—

  • বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ নির্ধারণ,
  • চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,৫০০ টাকা করা,
  • উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এমপিওভুক্তদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা শিক্ষকরা ‘প্রহসনমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে নতুন প্রস্তাব পাঠায়—বাড়িভাড়া ভাতা ২,০০০–৩,০০০ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশসহ। তবে এখনো এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়নি।

 

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন পান; তাদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা এবং বাড়িভাড়া ভাতা ১,৫০০ টাকা। উৎসব ভাতা বর্তমানে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে প্রদান করা হচ্ছে।

 

রাজধানীতে পুলিশের বলপ্রয়োগে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বড় প্রভাব পড়তে পারে।

সব খবর

আরও পড়ুন