সর্বশেষ

দুই বছর ধরে কোথায় আটকে আছে সুপারিশ?

অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে রাজউকের সতর্কতা উপেক্ষায় বাড়ছে ভূমিকম্পে ধসের ঝুঁকি

রাজধানী ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০:২৭
অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে রাজউকের সতর্কতা উপেক্ষায় বাড়ছে ভূমিকম্পে ধসের ঝুঁকি

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০২৩ সালে রাজধানীর বিভিন্ন ভবন নিয়ে জরিপ চালিয়ে ৪২টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছিল। একই সঙ্গে ১৮৭টি ভবনকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী রেট্রোফিটিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই বছর পার হলেও এসব ভবন বহাল তবিয়তে রয়েছে। শুধু সরকারি ২২৯টি ভবনই নয়, বেসরকারি ভবনগুলোও আরও নাজুক অবস্থায় রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও আল বেরুনী হলকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেখানে এখনো শিক্ষার্থীরা বসবাস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ভবনগুলো পুরোনো হলেও বড় ধরনের কাঠামোগত সমস্যা দেখা যায়নি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে রেট্রোফিটিং করাই বাস্তবসম্মত হতে পারে। এজন্য ইউজিসি ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।  

 

রাজউকের জরিপে দেখা যায়, রাজধানীতে ২১ লাখ ৪৫ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ সাড়ে আট লাখ ভবন বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়তে পারে। ঢাকায় বহুতল ভবন আছে ৭৫ হাজারের বেশি। এমনকি সরকারিভাবে নির্মিত নতুন ভবনেরও ৩৭ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ১৭তলা ভবনও রয়েছে।  

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরাজীর্ণ পুরনো ভবন থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে ছাদের কঙ্কাল দৃশ্যমান

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, তারা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজউকের প্রতিবেদন না পাওয়ায় উদ্যোগ ব্যাহত হয়। পরে বুয়েট জানায়, চারটি পরীক্ষা করতে ৪৫ লাখ টাকা খরচ হবে। অর্থের সংস্থান না হওয়ায় কাজ এগোয়নি।  

 

রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, ভবন নির্মাণে ন্যূনতম মান বজায় রাখা হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতি হবে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার। রেট্রোফিটিংয়ের জন্য খরচ হবে ৬২ মিলিয়ন ডলার।  

 

রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো বড় দুর্ঘটনার সতর্কবার্তা দিচ্ছে। দায় চাপানোর পরিবর্তে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজউক জরিপ করে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ভবন ভেঙে ফেলা ও রেট্রোফিটিংয়ের জন্য জানিয়েছে।  

 

রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ে রাজউকের সুপারিশ থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সব খবর