বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং তাঁর প্যানেল বুধবার (২ অক্টোবর) মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ফলে সরকার সমর্থিত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পক্ষের বেশির ভাগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
তামিম ইকবাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজকে ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেছে। আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করুন, তারপর ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার কথা বলুন।” তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
কাউন্সিলর নিয়েই শুরু হয় বিরোধ
১ সেপ্টেম্বর বিসিবি বিভিন্ন জেলা, বিভাগ, ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কাউন্সিলর মনোনয়নের জন্য চিঠি দেয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বিভাগীয় কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তামিম ও বুলবুল সমর্থকদের মধ্যে।
তামিমের প্যানেল থেকে ৫৪ জন কাউন্সিলর ফরম জমা দিলেও পরবর্তীতে বিসিবি সভাপতি বুলবুল জেলা ও বিভাগীয় অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর মনোনয়নের নির্দেশ দেন। এ সিদ্ধান্ত আদালত বৈধ ঘোষণা করলে তামিমের শিবির ব্যাকফুটে চলে যায়।
এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের পর্যবেক্ষণে ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ স্থগিত হয়, যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়। সর্বশেষ আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় তামিমের প্যানেল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন বুলবুল সমর্থকেরা
তামিমের প্যানেল সরে দাঁড়ানোয় ক্লাব ক্যাটেগরিতে ভোটে লড়বেন মাত্র ১৬ প্রার্থী। অন্যদিকে বিভাগীয় পর্যায়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট থেকে মোট ছয়জন পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার আবদুর রাজ্জাক, সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরসহ বুলবুল ঘনিষ্ঠ প্রার্থীরা।
এ নিয়ে বিসিবির সাবেক কর্মকর্তা ইসরাফিল খসরু বলেন,
নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে। জেলা, বিভাগ থেকে ক্লাব—সব জায়গায় স্বচ্ছতা উপেক্ষা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে কাউন্সিলরশিপ স্থগিত করে পুরো প্রক্রিয়াটাই প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো।
বিএনপি–ঘেঁষা প্যানেল নিয়ে সমালোচনা
তামিম ইকবালের প্যানেল নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। এতে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সন্তানরা প্রার্থী হন। যেমন আমীর খসরুর ছেলে ইসরাফিল খসরু, মির্জা আব্বাসের ছেলে ইয়াসির আব্বাস, বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে ওমর শরীফ ইমরান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে সাঈদ ইব্রাহীম। তাদের অনেকেই সরাসরি ক্রিকেট সংগঠক নন, তবু বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সব মিলিয়ে এবারের বিসিবি নির্বাচনকে বিশ্লেষকরা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম “কালো অধ্যায়” হিসেবে দেখছেন।