সর্বশেষ

চট্টগ্রামে বিনিয়োগ প্রস্তাবে ধস: এক বছরে কমেছে ৩০ শতাংশ

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৭
চট্টগ্রামে বিনিয়োগ প্রস্তাবে ধস: এক বছরে কমেছে ৩০ শতাংশ
ছবি সৌজন্য: বণিক বার্তা

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প-অর্থনৈতিক কেন্দ্র। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে বিনিয়োগ প্রস্তাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বিভাগে নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এক বছরে বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশ।

 

বিনিয়োগ বাড়লেও কর্মসংস্থান কম 

 

চট্টগ্রামে বিনিয়োগ নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিবন্ধিত হয়েছে ১৪৬টি প্রতিষ্ঠান, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৮০টি। তবে সংখ্যায় বৃদ্ধির পরও কর্মসংস্থানে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বরং অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমেছে বা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান প্রত্যাশিত হারে তৈরি হচ্ছে না।

 

কেন বিনিয়োগ কমছে

 

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালানি সংকট, জমির উচ্চমূল্য, ডলার ঘাটতি এবং প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগ পরিবেশকে নষ্ট করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তরুণ উদ্যোক্তা জানান, নতুন প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে না। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান বাড়লেও বাস্তবে তারা সীমিত বিনিয়োগ করছে।

 

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকট—এই তিনটি ধাক্কা দেশের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করছে। উচ্চসুদের ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা অবাস্তব।” তার মতে, বর্তমানে উদ্যোক্তাদের ঋণের সুদহার প্রায় ১৪ শতাংশ। এতে ব্যবসার লাভের বড় অংশ সুদ পরিশোধেই চলে যায়।

 

বিনিয়োগের ধারা

 

বিডার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছিল। ওই সময় ৩১১টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে পরবর্তী তিন অর্থবছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২) বিনিয়োগ প্রস্তাবে ভাটা পড়ে। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকায় এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও কমে ১ হাজার ৯৬০ কোটিতে নেমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কিছুটা উন্নতি হলেও গত দুই অর্থবছরে আবারও বিনিয়োগ কমেছে।

 

২০১১-১২ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ২ হাজার ৯৮০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ নিবন্ধন নিয়েছে। সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হওয়ার কথা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৬ জনের। এর মধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৩৪টি, যাদের বিনিয়োগ ৭৩০ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান ১০ হাজার ৪১ জনের। বিপরীতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯০২, যারা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৫ জনের।

 

সাম্প্রতিক বিনিয়োগ

 

২০২৪ সালের শেষার্ধে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নিবন্ধনের মধ্যে রয়েছে ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস (১৯৯ কোটি টাকা), সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স (২৭৫ কোটি), কেডিএস গার্মেন্টস (২৫২ কোটি), রমাহ হেলথকেয়ার (৭১ কোটি), সিএসসিআর হাসপাতাল (৮৩ কোটি)। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে পিটুপি হেলথকেয়ার পিএলসি (২১৮ কোটি), আলপিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (৭৯ কোটি), বে-লিংক কনটেইনারস (৮৮ কোটি), টিকে গ্রুপের ম্যাফ সু লিমিটেড (৪৭ কোটি)সহ বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। তবে এগুলো সামগ্রিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

 

সংকট কাটাতে করণীয়

 

অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা মনে করছেন, চট্টগ্রামে বিনিয়োগের গতি ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা, জমির মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা দরকার। নইলে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক শিল্পখাত আরও বড় সংকটে পড়বে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সব খবর

আরও পড়ুন

ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি কমছে, নাজুক হচ্ছে অর্থনীতি

ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি কমছে, নাজুক হচ্ছে অর্থনীতি

দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনায় গভীর ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি

আইএমএফের কড়া সতর্কবার্তা দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনায় গভীর ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে আরও পতন, সূচক সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

শেয়ারবাজারে আরও পতন, সূচক সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

সয়াবিন তেল লিটারে বাড়তে পারে ৯ টাকা ২৭ পয়সা

ফের বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম সয়াবিন তেল লিটারে বাড়তে পারে ৯ টাকা ২৭ পয়সা

শুল্কের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধাক্কায় পোশাক খাতজুড়ে উদ্বেগ

টানা তিন মাস রপ্তানি হ্রাস শুল্কের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধাক্কায় পোশাক খাতজুড়ে উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কিনছে বাংলাদেশের তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কিনছে বাংলাদেশের তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান

অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ

তৈরি পোশাক খাতে বড় ধস অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ

নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

১২ মাসে ১৮২ কারখানা বন্ধ, কর্মসংস্থানে ধস নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত