অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন বছরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থ বিভাগের প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর হবে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) আনুষ্ঠানিক পরিপত্র জারি করবে।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার ১১.৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯.৭২ শতাংশ। নতুন প্রস্তাবে গড়ে ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর কথা বলা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি এখনো তার কাছে পৌঁছায়নি। তবে ব্যাংক খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কিছুটা কমানোর দাবি রয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ছোট অঙ্কের বিনিয়োগে তুলনামূলক বেশি মুনাফা এবং বড় অঙ্কের বিনিয়োগে কম মুনাফা নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা এর কম বিনিয়োগে বেশি হার এবং এর বেশি বিনিয়োগে কম হার কার্যকর হতে পারে।
এর আগে গত ৩০ জুন সরকার আয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নিয়মিতভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় গড় মুনাফা কিছুটা কমানো হয় এবং ছয় মাস পর পুনরায় হার নির্ধারণের কথা জানানো হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
আইআরডি সচিব মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, মুনাফার হার বাড়বে না কমবে—এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থ বিভাগের সুপারিশ পাওয়া গেলে পরিপত্র জারি করা হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন পরিবার সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে জনপ্রিয়। বর্তমানে এতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর শেষে মুনাফা ১১.৯৩ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগে ১১.৮০ শতাংশ। গত ১ জুলাইয়ের আগে এই হার ছিল ১২ শতাংশের বেশি।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে একইভাবে কম বিনিয়োগে ১১.৯৮ শতাংশ এবং বেশি বিনিয়োগে ১১.৮০ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে এ হার যথাক্রমে ১১.৮৩ ও ১১.৮০ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে কম বিনিয়োগে ১১.৮২ শতাংশ এবং বেশি বিনিয়োগে ১১.৭৭ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবেও একই হার কার্যকর।
তবে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবের মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেছেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলনামূলক বেশি থাকায় বড় অঙ্কের সঞ্চয় সরকারি খাতে চলে যায়। হার কিছুটা কমলে সেই অর্থ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে আসবে, যা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই–অক্টোবর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার নিট ২,৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট ঋণ ছিল ঋণাত্মক, প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।
সার্বিকভাবে বলা যায়, নতুন বছরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমার সম্ভাবনা প্রবল। ছোট বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সুবিধা পেলেও বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য হার কমতে পারে। সরকার ব্যাংক খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় এ উদ্যোগ নিচ্ছে।