সর্বশেষ

প্রাণভয়ে ছাদে আটকা ছিলেন সাংবাদিকরা

হাদি সমর্থকদের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত প্রথম আলো–ডেইলি স্টার ভবন

রাজধানী ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৩২
“কপাল ভালো, আজ বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। জানি না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে।”
হাদি সমর্থকদের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত প্রথম আলো–ডেইলি স্টার ভবন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দেশের অন্যতম শীর্ষ দুটি সংবাদমাধ্যম ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এবং বাংলা দৈনিক প্রথম আলো–এর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুরো ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে একদল উন্মত্ত লোক এ হামলা চালায়।

 

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনায় ব্যস্ত। ভবনের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় জমেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পুলিশ সদস্যদেরও অবস্থান করতে দেখা গেছে।

 

পুড়ে যাওয়া প্রথম আলো ভবনের অভ্যন্তর

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ডেইলি স্টার ভবনের ১ম থেকে ৩য় তলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে গেছে। এসব তলার অফিস কক্ষ, আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে ৪র্থ থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত অফিস কক্ষগুলোতে চালানো হয়েছে ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুর। কম্পিউটার, হার্ডড্রাইভ, আসবাব, নথিপত্রসহ প্রায় সব কিছু তছনছ করে ফেলা হয়েছে। এক কথায় পুরো ভবনই এখন ধ্বংসস্তূপ।

 

ভবনের সামনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলতে দেখা যায়। নিজের কর্মস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডেইলি স্টারের ফটোসাংবাদিক প্রবীর দাশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার সব স্মৃতি, আমার এত বছরের ক্যারিয়ারে তোলা ছবি—চার-পাঁচটি হার্ডড্রাইভ। অগ্নিসংযোগকারীরা হয়তো জানে না, একজন সাংবাদিকের কাছে এসব জিনিসের মূল্য কতটা।”

 

ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ডেইলি স্টারের সম্মুখভাগ

 

আরেকজন সংবাদকর্মী জানান, আগুনে শুধু অফিস নয়, পুড়ে গেছে তার বহুদিনের স্বপ্নও। তিনি বলেন, আগামী রবিবার একটি ফ্ল্যাট কেনার কথা ছিল। সেই ফ্ল্যাট কেনার জন্য ধার করে জোগাড় করা ১০ লাখ টাকা তিনি অফিসে রেখেছিলেন, যা আগুনে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া তার পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।

 

হামলার সময় ডেইলি স্টার ভবনের ছাদে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকা পড়েছিলেন ২৮ জন সংবাদকর্মী। তাদের একজন জানান, রাত পৌনে ১টার দিকে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার খবর পাওয়ার পর ডেইলি স্টারের কর্মীরা ভবন ছাড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে নিচে ‘মব’ এসে ভাঙচুর শুরু করে এবং এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

 

পুড়ে যাওয়া ডেইলি স্টার ভবন

 

ধোঁয়ার কারণে নিচে নামতে না পেরে তারা দশতলার ছাদে উঠে যান। আতঙ্কের মধ্যে ক্যান্টিন বয় একজন সাহস করে ফায়ার এক্সিট দিয়ে নামতে গেলে তিনি হামলাকারীদের হাতে মারধরের শিকার হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধার চেষ্টা করলেও নিচে উন্মত্ত জনতার উপস্থিতিতে কেউ নামতে সাহস পাননি।

 

এক পর্যায়ে ছাদে হামলাকারীরা উঠে দরজায় ধাক্কা দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ভোর পৌনে ৪টার দিকে আটকা পড়া সাংবাদিকদের নিরাপদে বের করে আনা হয়।

 

ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে ওই সাংবাদিক বলেন, “কপাল ভালো, আজ বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। জানি না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে।”

সব খবর

আরও পড়ুন

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ইত্তেফাক

৭৩ বছরে পদার্পণ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ইত্তেফাক

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

প্রথম আলো–ডেইলি স্টারে হামলা তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

বাংলাদেশের পত্রিকা অফিসে হামলার নিন্দা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে

অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান বাংলাদেশের পত্রিকা অফিসে হামলার নিন্দা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে

খুলনায় সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলনকে গুলি করে হত্যা

খুলনায় সাংবাদিক ইমদাদুল হক মিলনকে গুলি করে হত্যা

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার নিন্দা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সাংবাদিক সংগঠনের

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও দোষীদের জবাবদিহির দাবি প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার নিন্দা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সাংবাদিক সংগঠনের

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হাদি সমর্থকদের হামলা ও অগ্নিসংযোগ

আটকা পড়েছেন বহু সাংবাদিক প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হাদি সমর্থকদের হামলা ও অগ্নিসংযোগ

মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫

আর্টিকেল নাইন্টিনের উদ্বেগ মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫

সাংবাদিক আনিস আলমগীরের অবিলম্বে মুক্তির দাবি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সিপিজে, পেন বাংলাদেশের বিবৃতি সাংবাদিক আনিস আলমগীরের অবিলম্বে মুক্তির দাবি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর