খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির পরিচালক কবি সরকার আমিন ও প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। ল্যাবএইড হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফারুক আহমেদ জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মারা যান।
শুক্রবার সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে পুনরায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এর আগে, গত ৩ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ওইদিন রাতেই চিকিৎসকেরা তার হার্টে দুটি রিং স্থাপন করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেওয়া হয়।
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শনিবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখা হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউদ্দিন স্টালিন এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং সকলকে শনিবার শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে এই বরেণ্য সাহিত্যিককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন।
১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তার বাবা সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মা রাবেয়া খাতুন। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। পরে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটস-এর কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি দীর্ঘ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং অবসরের পর যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব)। ২০২৩ সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে থাকা না থাকার গল্প, কাচ ভাঙ্গা রাতের গল্প, অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প, প্রেম ও প্রার্থনার গল্প প্রভৃতি। উপন্যাসগুলোর মধ্যে আধখানা মানুষ্য, দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন বিশেষভাবে প্রশংসিত।
সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৮ সালে একুশে পদক লাভ করেন।