১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। রবিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “আমরা চাই যে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় পাকিস্তান স্বীকার করুক এবং এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করুক। একই সঙ্গে আটকে থাকা মানুষদের ফেরত নেওয়া এবং আর্থিক বিষয়গুলো সমাধান করার দাবি জানিয়েছি।”
তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, ১৯৭১ সালের বিষয়গুলো ১৯৭৪ ও ২০০২ সালের চুক্তির মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি একমত নই। যদি সমাধান হয়ে যেত, তাহলে আজ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো না।”
‘গণহত্যা’ শব্দটি বৈঠকে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “আমরা বাংলাদেশের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরেছি। কিছু বিষয় কূটনৈতিকভাবে বলতে হয়। এ বিষয়ে আমাকে দায়িত্ব দিন। শুধু এটুকু বলবো, আমাদের অবস্থান আমরা স্পষ্ট করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “দুই পক্ষই সম্মত হয়েছি যে, আটকে থাকা সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে এগুলো পেছনে ফেলতে হবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি।”
“পাকিস্তান কি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে সম্মত হয়েছে?” সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আপনারা আমার মুখে আপনার বক্তব্য বসিয়ে দেবেন না। আমরা নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। এটুকুই অগ্রগতি যে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালানো দরকার, যাতে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকে।”
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি ও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে আসছে। জাতিসংঘের গবেষণা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে এ হত্যাযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান সরকার আজও আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থানই বলে দিবে ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কর্তৃত্ব প্রভাবিত করবে কোনপক্ষ।