জনমুখী, স্বচ্ছ ও কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন মোট চার শতাধিক সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে জরুরি কার্যকরের জন্য ৩৩টি সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে চলতি বছরের আগস্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। তবে আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ছয়টি। বাকি ২৭টি সুপারিশ কীভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব এমন সংস্কারগুলো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কিছু সংবেদনশীল সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, যেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়েছে তার প্রভাব আগামী দেড় মাসের মধ্যে দৃশ্যমান হবে। পাশাপাশি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি ২৭টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত ৫ মে কমিশন প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। এরপর ১৩ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৈঠকে স্বল্প (৬ মাস), মধ্য (১–২ বছর) ও দীর্ঘমেয়াদি (২ বছরের বেশি) পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ৩৩টি সুপারিশকে স্বল্পমেয়াদি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকারি স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের কেনাকাটায় ই-জিপি চালু হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও ওষুধ প্রেসক্রাইব কমাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওষুধ কোম্পানির প্যাডে প্রেসক্রিপশন লেখা বন্ধ হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে দ্রুত সার্ভিস সেন্টার চালু হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের পদে নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন এবং ইন্টার্ন ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের বেতন হালনাগাদ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নামে দুই বিভাগকে একীভূত করাও সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী দেড় মাসে আরও ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। চলতি মাসে ১১টি সুপারিশ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনার বৈঠক হবে। বাস্তবায়নাধীন সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—বিদ্যমান স্বাস্থ্য আইন সংস্কার, সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেটওয়ার্ক, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ, আবশ্যক ডায়াগনস্টিক তালিকা ও খরচ নির্ধারণ, ই-প্রেসক্রিপশন ও প্রেসক্রিপশন অডিট, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ইউনিট শক্তিশালী করা।
অপেক্ষমাণ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ হেলথ কমিশন গঠন, আবশ্যক ওষুধ বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ, স্বাস্থ্য তথ্য সুরক্ষা আইন, স্বতন্ত্র হেলথ আইডি চালু, ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি সেবা, নগরস্বাস্থ্যের জন্য ১৭০টি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে তিন অধিদপ্তরের অধীনে আনা।
সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, এসব সুপারিশ কার্যকর হলে সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে, ওষুধ পাওয়া সহজ হবে এবং প্রাথমিক চিকিৎসায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর জানান, অনেক সুপারিশে আইন সংশোধন ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। সরকার মানবসম্পদ, প্রযুক্তি, জবাবদিহি ও প্রশাসনিক সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।