বকেয়া বিল পরিশোধে আদানি গ্রুপের দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার আংশিক অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বকেয়া ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সময়সীমা ছিল সোমবার (১০ নভেম্বর)। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ পরিশোধ না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ভারতীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। পরিস্থিতির জটিলতা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান বলেন, আদানির সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে এবং আদানির দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি রিট হাইকোর্টে বিচারাধীন। তিনি জানান, “অন-প্রটেস্ট ভিত্তিতে আংশিক পেমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” আদানি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ব্যাংককে পেমেন্ট প্রসেসিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একবারে পুরো অর্থ দেওয়া হবে না; এই মাসের মধ্যে কয়েক ধাপে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পিডিবি আরও জানায়, আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত আদানির কেন্দ্র থেকে ৮৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছে বাংলাদেশ, অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়নি।
নভেম্বরের শুরুতে বকেয়া পেমেন্টের জন্য আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে আল্টিমেটাম দেয় আদানি। চিঠিতে দাবি করা হয়, পিডিবি বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিতের আইনগত অধিকার হয়েছে। একইসঙ্গে ১০ নভেম্বরের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ না করলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় আদানি পাওয়ার।
তবে বকেয়ার অঙ্ক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বড় মতপার্থক্য রয়েছে। আদানি যেখানে মোট বকেয়া ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার দাবি করছে, বাংলাদেশ বলছে বকেয়ার পরিমাণ ২৬২ মিলিয়ন ডলার। কয়লার দাম, অতিমূল্যায়ন, পরিবহন খরচ এবং বিলম্ব জরিমানা নিয়ে দুটি পক্ষের দাবি-আপত্তি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দেশের হাইকোর্টে দুর্নীতির অভিযোগে একটি রিট ইতোমধ্যে চলমান।
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানির পরিবহনকৃত কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারে। ২০২৩ সালের মার্চে প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু হলে বাংলাদেশ গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পায়, পরে জুন থেকে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। ২০১৭ সালে পিডিবি ও আদানি গ্রুপের মধ্যে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি হয়। মূলত বাংলাদেশে সরবরাহের জন্যই কেন্দ্রটি নির্মিত হলেও ২০২৪ সাল থেকে ভারতেও সরবরাহের বিকল্প তৈরি করেছে কোম্পানিটি।
বর্তমানে অর্থ পরিশোধ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা—দুই দিক সামলাতে সরকার কূটনৈতিক ও আর্থিকভাবে নড়াচড়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে।