বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সোমবার (৬ অক্টোবর) প্রকাশিত সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৮২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এতে এ বছর মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৬৮৯ জনে।
একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী, বয়স যথাক্রমে ৩৫, ৮৫ ও ২৮ বছর। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২১৫ জনে।
অক্টোবরের প্রথম পাঁচ দিনে দেশে ৩৩৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেপ্টেম্বর ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মাস—এ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৫ হাজার ৮৬৬ জন এবং মৃত্যু হয় ৭৬ জনের। এর আগে জুলাইয়ে ভর্তি হয়েছিল ১০ হাজার ৬৮৪ জন, অগাস্টে ১০ হাজার ৪৯৬ জন এবং জুনে ভর্তি হয়েছিল ৫ হাজার ৯৫১ জন।
ডেঙ্গুর কারণে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিল ১১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে মাসে ১৭৭৩ জন রোগী। মৃত্যুর হিসাবে জুলাইয়ে ৪১ জন, অগাস্টে ৩৯ জন, জুনে ১৯ জন, এপ্রিলে সাতজন, জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন ও মে মাসে তিনজনের মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। মার্চে কোনো মৃত্যুর তথ্য নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বাধিক ২১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১৪২ জন, ময়মনসিংহে ৩৫ জন, চট্টগ্রামে ৮৩ জন, খুলনায় ৫৭ জন, রাজশাহীতে ৮৪ জন, রংপুরে ১১ জন, বরিশালে ১৭৮ জন এবং সিলেটে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৮৫১ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ১ হাজার ৬২২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ বছর—সে বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে না এলে সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরেও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে পারে। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও টেকসই উদ্যোগের বিকল্প নেই।