বাউল আবুল সরকারের গ্রেপ্তার এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার–দরবারে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়েছে। ‘আক্রান্ত ও ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের প্রতিরোধ যাত্রা’ শীর্ষক এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সমাজে ক্রমান্বয়ে বৈষম্যবাদী তৎপরতা, সন্ত্রাসী হামলা ও মব সহিংসতা বাড়ছে।
তার অভিযোগ, সারা দেশে শত শত মাজার, বাউল গানের আসর এবং বাউল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর ধারাবাহিক হামলা চলছে, অথচ এসব ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, “জনগণবিরোধী ঘটনা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করবেই। আজকের প্রতিরোধযাত্রা সেই ক্ষোভ ও বিক্ষোভেরই অংশ।”
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিক্ষোভ–সমাবেশ দমন করার সরকারি বক্তব্যের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার যদি জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা না করে এবং সহিংসতা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নেয়, তবে এমন বিক্ষোভের জন্ম হতো না। তিনি সরকারের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত তদন্ত, বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মতাদর্শ যাই হোক না কেন, কারও ওপর সন্ত্রাসী হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যেক নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে এবং যারা গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করতে চায়, তারাই এসব হামলার সঙ্গে জড়িত।
মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার প্রচেষ্টারও কড়া সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ডিসেম্বর বিজয়ের মাস এবং যারা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করতে চায়, তারা জনস্বার্থবিরোধী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শত শত বছরের মুক্তির সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক গণজোয়ার, যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সর্বশেষ জুলাই ২৪-এর আন্দোলন সেই পরম্পরারই অংশ।
সাংস্কৃতিক সমাবেশের শুরুতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর স্মরণে নিরবতা পালন করা হয়। পরে গণসাংস্কৃতিক ঐক্য ও উদীচীর শিল্পীরা দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন। একক আবৃত্তি করেন শামসুজ্জামান মিলন, দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি ফেডারেশন। বটতলা ও প্রাচ্যনাট দুটি নাটক মঞ্চস্থ করে। বাংলাদেশ বাউল সমিতির শিল্পীরা বাউল সংগীত পরিবেশন করেন।
সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত একটি মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আমীরুন নুজহাত মণীষা সমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি পাঠ করেন।