রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) এবং তার স্ত্রী সুর্বনা রায় (৬০) এর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে তাদের নিজ বাড়িতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৮০) ও তাঁর স্ত্রী সুর্বনা রায় (৬০)–কে গলা কেটে হত্যা করার ঘটনায় এলাকায় গভীর শোক, ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁর স্ত্রীকে নিশ্ছিদ্রভাবে টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায় এটি পরিকল্পিত বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
ঘটনা জানাজানি হয় শনিবার ভোরে। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও কোনও সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশী দীপক নামে এক ব্যক্তি বাড়ির গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। রান্নাঘরে সুর্বনা রায় এবং শয়নকক্ষে যোগেশ রায়কে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি দ্রুত স্থানীয়দের খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের দাবি, হত্যাকাণ্ডের ধরন, সময় ও টার্গেট নির্বাচন কোনোভাবেই সাধারণ অপরাধের মতো নয়। তারা মনে করছেন, এটি স্বাধীনতা-বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সংগঠিত গোষ্ঠীর কাজ হতে পারে।
সংখ্যালঘু পরিবারকে লক্ষ্য করে ভয়ভীতি ছড়ানো, মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের ওপর প্রতিশোধমূলক আঘাত, এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা, এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানো এসব উদ্দেশ্য সামনে রেখেই এ ধরনের টার্গেটেড হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিক ভয়ভীতি, হামলা ও নির্যাতনের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় উদ্বেগ আরও ঘনীভূত হয়েছে। অতীতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর ওপর হামলার ইতিহাস এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণাচর্চা–নির্ভর সহিংসতার ধারা মিলিয়ে অনেকেই এটিকে বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ বলেই দেখছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো কোনো নির্দিষ্ট জড়িত পক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করেনি। প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত করা হলেও পিছনের উদ্দেশ্য ও সম্পৃক্ত গোষ্ঠী সম্পর্কে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ও স্বাধীনতা-বিরোধী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা—এ দুটো বিষয়কেই তদন্তের আওতায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটায় তারা এখন আরও বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। তাদের দাবি,“এটি কেবল একটা পরিবারের ওপর হামলা নয় এটি পুরো সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর ইঙ্গিত।”